বিএনপি-জামায়াত সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারি

'থামাও সহিংসতা, আমরা মানবতার পক্ষে'

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মাদারীপুর থেকে ঢাকায় শীতের জ্যাকেট কিনতে এসেছিলেন কলেজে পড়ুয়া এক তরুণ। কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফেরার আগেই বাসে দেওয়া আগুনে দগ্ধ হতে হয় তাকে। তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। পুলিশের যে সদস্য পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন, ঘরে তার শিশুকন্যা এখনো বাবাকে খুঁজে ফেরে। বুধবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এমন অনেক মানুষের স্বজনরা। 'বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট' এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। 'বিএনপি-জামায়াত থামাও সহিংসতা, আমরা মানবতার পক্ষে' প্রতিপাদ্যের মানববন্ধন কর্মসূচিতে আহত ও নিহতদের স্বজনদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এতে জোর দাবি ওঠে, 'মানুষ পোড়ানো কোনো রাজনীতি হতে পারে না।' মানববন্ধন কর্মসূচিতে ২০১৩ থেকে ২০১৫ এবং শেষ হওয়া বছরে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদলগুলোর সরকার পতনের আন্দোলনের সময়ে যে 'অগ্নিসন্ত্রাস' ঘটেছে তার 'শেষ' দেখার দাবিও উঠে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পিটিয়ে হত্যার শিকার পুলিশ কনস্টেবল মো. আমিরুল ইসলামের স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, 'ওই দৃশ্য ভোলা যায় না। মেয়ে তার বাবাকে খোঁজে। আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার একটাই দাবি, আমার স্বামীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার চেয়ে কঠিনভাবে যেন বিএনপি-জামায়াতকে শাস্তি দেওয়া হয়।' মাদারীপুরের কলেজ শিক্ষার্থী নাহিদের মা রুনি বেগম বলেন, 'আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না। জ্যাকেট কিনতে মাদারীপুরের শিবচর থেকে ঢাকায় এসেছিল। সেই ছেলে আর বাড়ি ফিরে যেতে পারে নাই। বিএনপি-জামায়াতরা বাসে পেট্রোল দিয়ে আমার ছেলেকে পোড়াইয়া হত্যা করেছিল।' ২০১৩ সালে শাহবাগে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মারা যায় ওই শিক্ষার্থী। সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেওয়া শিকদার মোহাম্মদ বলেন, 'এই বার্ন ইউনিট না থাকলে ৭৫ শতাংশ মানুষ বাঁচত না। আলস্নাহর কাছে দোয়া করি এই বার্ন ইউনিট করার জন্য আলস্নাহ যেন শেখ হাসিনাকে অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখেন।' মানববন্ধনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, 'বিবেকের তাগিদে আমি আজ এখানে এসেছি। আমি কাছ থেকে রোগীদের দেখি, তাদের যন্ত্রণা দেখে আমি নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারব না। আমি সারাজীবন পোড়া রোগী দেখে আসছি। রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়ে যে পোড়া রোগীগুলো আসে, এই ২০১৪, ২০১৫ তারপর এখনো তাদের কাছে গেলে বোঝা যায় তাদের কী যন্ত্রণা।' তিনি বলেন, 'তাদের কাছে আমার অনুরোধ, দয়া করে এইভাবে মানুষ পোড়াবেন না। গণতন্ত্র মানে মানুষ পোড়ানো না। আপনারা ভোটে আসুন, ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসুন। মানুষ পোড়ানো কোনো রাজনীতি হতে পারে না।' আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নাশকতাকারীদের 'দাঁতভাঙা' জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব কামরুল হাসান বলেন, 'আপনারা দেখেছেন, কীভাবে ট্রেনে মায়ের কোলের শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনের মাধ্যমে তাদের (বিএনপি) জন্ম, খুনের নেশায় তারা মত্ত।' সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, '২০১৪ সালের নির্বাচনপূর্ব সহিংসতায় ৩ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল, ৪৭ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২১ জন সদস্য নিহত হয়েছিলেন। নির্বাচনে দায়িত্বরত ২৬ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল। ৫ শতাধিক স্কুল ভস্মীভূত করা হয়েছিল এবং আরও অনেক নাশকতা চালানো হয়েছিল। আমরা দেখেছি সেটি ২০২৩ সালেও অব্যাহত ছিল। আমরা অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানবতার পক্ষে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, '৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা জনগণ ম্যান্ডেট দেব, যাতে মানবতার বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করে, দল-সংগঠন যারাই করে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হয়।' মানববন্ধনে বিক্ষুব্ধ শিল্পীসমাজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিকজোট বাংলাদেশ, মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যমঞ্চ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন, বাংলাদেশ গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হিউমেন রাইটস ফাউন্ডেশন, সপ্তডিঙ্গা এনজিও, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ও ওয়ান বাংলাদেশ'র প্রতিনিধিরা অংশ নেন।