মির্জাপুরে আ'লীগ-জাপা নেতারা নৌকা-লাঙ্গল ছেড়ে ট্রাকে
প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতাকর্মী নৌকা ও লাঙ্গল ছেড়ে ট্রাক প্রতীকের নির্বাচন করছেন। উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির পদধারী ওই নেতারা দল মনোনীত প্রার্থীর নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের বিপক্ষে ভোটের মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে চরম ঝুঁকিতে আছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিজয়।
ওই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের ছেলে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু। তিনি তিনবার উপজেলা পরিষদ ও পাঁচবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। একইসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন হাফ ডজন নেতা। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টু দলীয় মনোনয়ন চাননি। তবে তিনি ঘোষণা করেছিলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ছাড়া অন্য যে কেউ মনোনয়ন পেলে তিনি তার পক্ষেই কাজ করবেন। আর যদি বর্তমান সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ত্যাগ করে নির্বাচন করবেন। বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় অন্যসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের কার্য নির্বাহী কমিটির সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্তসহ ৪০ জনেরও বেশি নেতা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর ট্রাক প্রতীকের জন্য কাজ করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ডের 'নো অ্যাকশন' পলিসির কারণে ট্রাকের প্রচারে নেমেছেন পৌর মেয়র সালমা আক্তার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মীর্জা শামীমা আক্তার শিফা, ভাইস চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, সাতজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ অধিকাংশ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা।
এদিকে, এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জহিরুল ইসলাম জহিরও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর ট্রাককে সমর্থন দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি উপজেলার কামারপাড়া বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর ট্রাক প্রতীকের পথসভায় যোগ দিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। এরপর থেকে উপজেলা, পৌরসভা ও সকল ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর ট্রাক প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনে নেমেছেন। ফলে এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া প্রায় দুরূহ হয়ে পড়েছে।
\হনৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ব্যক্তিগত ইমেজ দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। মির্জাপুর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের একাংশ, সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন মনি, শহীদুর রহমান শহীদ, হিতেশ চন্দ্র পুলকসহ বেশ কিছু সাবেক জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মী তার সঙ্গে রয়েছেন। তারা নৌকার প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ জানান, মির্জাপুর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ ভোটাররা এক হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পক্ষে ভোটের মাঠে নেমেছেন। তারা ট্রাক প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য নিজের খেয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন। যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে- তাহলে ট্রাকের বিজয় সুনিশ্চিত।
\হনৌকার নির্বাচন সমন্বয়কারী মোশাররফ হোসেন মনি জানান, সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ উপ-নির্বাচনে প্রায় দেড় বছর আগে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি মানুষের মন জয় করেছেন। এবার তিনি এমপি হলে মির্জাপুরের কিছু নেতা তার জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও আসতে পারবে না। তাই প্রতিহিংসার কারণে কিছু নেতাকর্মী খান আহমেদ শুভর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর যেসব আওয়ামী লীগ নেতা নৌকা ফেলে ট্রাকে ওঠেছেন, তারা লোভে পড়ে নৌকার বিপক্ষে নেমেছেন। তবে তাদের বাধা নৌকার বিজয় ঠেকাতে পারবে না।
এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন- গোলাম নওজব চৌধুরী (হাতুড়ি), আরমান হোসেন তালুকদার (গামছা), জহিরুল ইসলাম জহির (লাঙ্গল)- তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, মঞ্জুর রহমান মজনু (মশাল), মোক্তার হোসেন (গোলাপ ফুল) ও রূপা রায় চৌধুরী (ডাব)।
টাঙ্গাইল-৭ সংসদীয় আসন মির্জাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫৮ হাজার ৪৫২।
প্রকাশ থাকে যে, বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভর বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফজলুর রহমান ফারুক এ আসন থেকে তিনি ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।