ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের নির্বাচনী মাঠ এখন সরগরম। এলাকার প্রতিটি গ্রাম ছেয়ে গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানারে। প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং, নির্বাচনী সভা, কর্মী সভা, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীসহ তাদের কর্মী-সমর্থকরা।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক সদস্য সচিব শাহজাহান আলম সাজু। কিন্তু দলীয়ভাবে আসন সমঝোতার কারণে আসনটি মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তখন শাহজাহান আলম সাজু তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তবে এ আসনে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন মঈন ও অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. রাজ্জাক হোসেন, তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হোসেন তুষার এবং বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরুল কুদ্দুছ।
ইসলামী ঐক্যজোটের আবুল হাসনাত আমিনী এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে। অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপির মাইনুল হোসেন তুষার এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে।
কাগজে-কলমে এ আসনে ৭ প্রার্থী লড়াই করলেও নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন মঈন ও অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক মৃধা এবং জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত এ আসনে ১৯৭৩ সালের পর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী জেলা সদরের কোড্ডা গ্রামের বাসিন্দা। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মঈন উদ্দিন মঈন আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর গ্রামের এবং অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার বাড়ি সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামে। পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন এ আসনের ভোটের হিসাবে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে আঞ্চলিকতা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার ঈগল প্রতীকের পক্ষে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর জিয়াউল হক মৃধার পক্ষে দিন-রাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
অন্যদিকে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈনের কলার ছড়ির পক্ষে কাজ করছেন। সরাইল উপজেলায়ও মঈন উদ্দিন মঈনের পক্ষে তার কর্মী-সমর্থকরা কাজ করছেন। শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনী মাঠে আঞ্চলিকতা কাজ করে তাহলে পাল্টে যেতে পারে ভোটের হিসাব।
তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াই জমতে পারে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন ও জিয়াউল হক মৃধার মধ্যে।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, 'আমরা জিয়াউল হক মৃধার ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করছি। সরাইলবাসীও ঈগলের পক্ষে কাজ করছে। নির্বাচনে অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ইনশা আলস্নাহ বিজয়ী হবেন।'
স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন সাংবাদিকদের জানান, তিনি নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। দুই উপজেলায় তার জন্য ভোটাররা কাজ করছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, 'ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। ওই আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে যার মতো পছন্দের প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী কাজ করছেন।'
সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন। দুই উপজেলায় রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন। মোট ভোটার ৪ লাখ ১ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬০৫ জন এবং আশুগঞ্জে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৬৭ জন।