মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শাম্মী-সাদিকের ভোটের দৌড় আপিল বিভাগে শেষ

শুনানি পেছাল ফরিদপুরের শামীম হকের, ছিটকে গেলেন নোয়াখালীর রুহুল আমিন, প্রার্থিতা বহাল যশোর-৪ ও সিলেট-২ আসনের প্রার্থীর
যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শাম্মী-সাদিকের ভোটের দৌড় আপিল বিভাগে শেষ

সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লড়ার সুযোগ পেলেন না বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাম্মী আহমেদ এবং বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুলস্নাহ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারকের আপিল বেঞ্চ দুই প্রার্থীর লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন। ফলে শাম্মী বা সাদিক কেউ আর নির্বাচন করতে পারবেন না।

এদিকে, একই বেঞ্চ ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের আবেদনের ওপর শুনানি পিছিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া নোয়াখালী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার রুহুল আমিনের আবেদন খারিজ করায় তিনি নির্বাচন করতে পারছেন না।

অন্যদিকে, যশোর-৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের বিরুদ্ধে করা নির্বাচন কমিশনের আপিল আবেদনে সাড়া না দেওয়া ও সিলেট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানকে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত না করায় এই দুইজনের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুলস্নাহ।

বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান এমপি পঙ্কজ দেবনাথের বদলে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করেছিল দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদকে। মনোনয়ন না পাওয়ায় পঙ্কজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যান। শুরু থেকেই তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছিল। পঙ্কজের অভিযোগ ছিল, শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার যাচাই বাছাইয়ে দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে শাম্মীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। পাশাপাশি তথ্য গোপনের অভিযোগে পঙ্কজ দেবনাথের প্রার্থিতা বাতিলেরও আবেদন করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে পঙ্কজের প্রার্থিতা টিকে গেলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে শাম্মীর প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এরপর তিনি হাইকোর্টে যান।

তার আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. ইকবাল কবির ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতেও তা বহাল থাকে।

প্রার্থিতা ফিরে পেতে শাম্মী ফের চেম্বার আদালতে গেলে চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ২৬ ডিসেম্বর ওই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

মঙ্গলবার সেই আবেদনের ওপর শুনানি নেয় আপিল বেঞ্চ, কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত আর বদলায়নি।

এদিকে বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুলস্নাহ দলের মনোনয়ন না পেয়ে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ তুলে তার মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন ওই আসনে নৌকার প্রার্থী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। শুনানি শেষে সাদিক আবদুলস্নাহর প্রার্থিতা বাতিল করে কমিশন।

অন্যদিকে জাহিদ ফারুক মামলার বিষয়ে তথ্য গোপন করেছেন অভিযোগ তুলে তার প্রার্থিতা বাতিলের আপিল করেছিলেন সাদিক আব্দুলস্নাহ। সেই আপিল নির্বাচন কমিশনে নামঞ্জুর করা হয়। ফলে জাহিদ ফারুকের প্রার্থিতা বহাল থাকে।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এরপর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সাদিক আব্দুলস্নাহ। সেই আবেদনের শুনানি করে ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উলস্নাহর বেঞ্চ বরিশাল-৫ আসনের এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে।

হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে এরপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম। সেই আবেদনের শুনানি করে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে।

এরপর সাদিক আব্দুলস্নাহ প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে ফের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বিষয়টি তখন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

মঙ্গলবার সেই শুনানি শেষে চেম্বার আদালতের সিদ্ধান্তই বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। ফলে সাদিক আব্দুলস্নাহর সংসদ নির্বাচন করার স্বপ্ন এবারের মতো শেষ হয়ে যায়।

শুনানি পেছাল ফরিদপুরের শামীম হকের

এদিকে শুনানি পিছিয়েছে ফরিদপুর-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের আবেদনের ওপর শুনানি। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ 'নট দিস উইক' (শুনানি এ সপ্তাহে নয়) এ আদেশ দেন।

\হদ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী এ কে আজাদ। শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক বলে অভিযোগ আনেন তিনি। এরপর শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর আপিল মঞ্জুর করে শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় ইসি। তার বিরুদ্ধে রিট করেন শামীম হক।

১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার রিট সরাসরি খারিজ করে দেন।

পরে ১৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে প্রার্থিতা ফেরত চেয়ে শামীম হক আবেদন করেন। ওইদিন চেম্বার আদালত তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন। এরপর এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এ কে আজাদ।

ছিটকে গেলেন নোয়াখালীর রুহুল আমিন

নোয়াখালী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার রুহুল আমিনের প্রার্থিতা বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রুহুল আমিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বেঞ্চ। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার রুহুল আমিন নির্বাচন করতে পারছেন না।

জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করে নোয়াখালী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন খন্দকার রুহুল আমিন। তাকে প্রতীকও বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান। তাতে সাড়া না পেয়ে ২০ ডিসেম্বর রিট করেন তিনি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুই সংস্থার প্রতিবেদনে খন্দকার রুহুল আমিনের দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ মেলে। তাই তার প্রার্থিতা বাতিলে পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনকে ২৭ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ বলেন, আজকের আদেশের ফলে খন্দকার রুহুল আমিন নির্বাচন করতে পারবেন না।

যশোরের বাবুলের প্রার্থিতা বহাল

যশোর-৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের আবেদনে সাড়া দেননি আপিল বিভাগ। ফলে এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে।

আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক জানান, এনামুল হক বাবুলের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ এনে আপিল করেছিলেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সুকৃতি কুমার মন্ডল। এছাড়া এনামুল হক বাবুলের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিত কুমার রায় আপিল করেছিলেন। শুনানি শেষে ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

পরে এনামুল হক বাবুল হাইকোর্টে রিট করেন। গত ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। এরপর তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ১৯ ডিসেম্বর চেম্বার আদালত তার প্রার্থিতা ফেরত দেন। পরে নির্বাচন কমিশন ওই আদেশ প্রত্যাহারে আবেদন করেন।

প্রার্থিতা বহাল সিলেটের মুহিবুরের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি এবং প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপিল বিভাগ স্থগিত না করায় সিলেট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে।

আদালতে মুহিবুর রহমানের পক্ষের আইনজীবী এম মঞ্জুর আলম জানান, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ না করায় মুহিবুরের নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ না করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কারণ উলেস্নখ করে ৪ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ১৫ ডিসেম্বর তা নামঞ্জুর করেন।

পরে ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন মুহিবুর। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দিতে এবং প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন ও কংগ্রেসের প্রার্থী মো. জহির আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে