দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ১১.৬ ডিগ্রি
হাড় কাঁপানো শীতে কাবু উত্তরাঞ্চলের মানুষ
প্রকাশ | ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
পঞ্চগড়, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
মৃদু শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও উত্তরের হাড় কাঁপানো কনকনে শীতল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়ের মানুষ। রোববারের মতো সোমবারও সেখানে বইছে শীতল বাতাস। ঘন কুয়াশা ও আকাশের মেঘ সরে গিয়ে রোববার দুপুরের মধ্যে সূর্যের দেখা মিললেও সোমবার সূর্য উঁকি দেয় বিকালে। তবে আকাশে মেঘ থাকায় সূর্যের তাপ গায়ে লাগেনি। মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হলেও এদিন সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। মেঘলা আকাশে সূর্যের প্রখরতা না থাকায় গত রোববার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নিচে নামায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
মাঝে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবারও শীত জেঁকে বসায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। জীবিকার তাগিদে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে তাদের কাজে বের হতে হয়েছে। সোমবার সকালে দেখা গেছে জেলা শহরের করতোয়া নদীতে হিমশীতল পানিতে নেমে পাথর উত্তোলনের কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকরা। শীতবস্ত্রের অভাবে গ্রামাঞ্চলে দিন-রাত খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে শীতার্ত মানুষগুলোকে। নির্বাচনী ডামাডোলের কারণে এবার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ হচ্ছে অনেক কম। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তি বাড়বে পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষগুলোর।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, উত্তর দিক থেকে শীতল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় গত দুই দিন ধরে পঞ্চগড়ে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। হিমালয়ের খুব কাছে অবস্থান হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা একটু বেশি। সোমবার সকালে এখানে দেশের সর্বনিম্ন্ন তাপমাত্রা ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এখন থেকে সর্বনিম্ন্ন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে তিনি জানান।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৃত গরিব ও অসহায় মানুষের মধ্যে এসব শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে শীতবস্ত্র চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে আমাদের রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বছ?রের শুরুতেই সোমবার কুড়িগ্রামের রাজারহাটে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষজন। এদিকে দিনের বেলাতেও সড়কে হেড লাইট জ্বালিয়ে ভারী যানবাহন চলতে দেখা গেছে। এছাড়া স্কুলগামী ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ঠান্ডা উপেক্ষা করে নতুন বছরে নতুন বই নিতে এসেছে। কনকনে ঠান্ডায়ও তাদের মনে আজ আনন্দ দেখা গেছে।
এদিন সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছে রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস।
উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, এতো ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হওয়াই কষ্ট। বাহিরে ঠান্ডা বাতাসে পুরো শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়। কিন্তু উপায় নেই কাজ তো করতে হবে।
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ বুড়িরহাট এলাকার বানু মামুদ, মহিলা বেওয়াসহ অনেকে বলেন, এতদিন শীত কম থাকলেও আজ (সোমবার) হঠাৎ ঠান্ডা বেড়ে গেছে। তিস্তা নদীর কনকনে বাতাসে মানুষ আজ (সোমবার) অতিষ্ট হয়ে গেছে। ঠান্ডায় তো কাজ-কাম করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ইরি-বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। যে হারে শীত শুরু হলো এতে বীজতলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, কুড়িগ্রাম অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে।