আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের চার জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন, ভাঙচুর, সংঘর্ষ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। জেলাগুলোর মধ্যে- বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। নাটোর সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা ১৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও কর্র্মী-সমর্থকদের কুপিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাট-৪ আসনের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের জিউধরা বাজারে নৌকা প্রার্থীর অস্থায়ী ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নিশানবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জিউধরা বাজারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের নৌকা প্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পে সোমবার ভোরে দুবৃর্ত্তরা আগুন দেয়। এতে ক্যাম্পে রাখা নৌকা প্রতীকের পোস্টার, ক্যাম্পের কাঠামো পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
বাগেরহাট পুলিশ অফিসের মিডিয়া সেলের পরিদর্শক সৈয়দ বাবুল আক্তার বলেন, 'আগুন লাগানোর ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। খুব দ্রম্নতই আগুন লাগানোর ঘটনায় কারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।'
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের তীরমারা জিন্দা লতিফ মার্কেটের সামনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগর প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
দাউদপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ আলী শিকদার বলেন, 'সোমবার ভোরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক রুবেল, সাগর ও খোকনের নেতৃত্বে ১৫-১৬ জন সন্ত্রাসী রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, এসএস পাইপসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পে হামলা চালায়। তারা নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে চেয়ার, পোস্টার, ব্যানার ও নির্বাচনী ক্যাম্প ভস্মীভূত হয়।'
তিনি বলেন, 'হামলাকারীরা ক্যাম্পে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর ও পদদলিত করে। তারা ক্যাম্পে থাকা নৌকা প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার ও ২০টি চেয়ার লুট করে।'
রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দাউদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন মোলস্না বলেন, 'সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দাউদপুর ইউনিয়নের তীরমারা জিন্দা লতিফ মার্কেটের নির্বাচনী ক্যাম্পে প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়েছে।'
দাউদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন খাঁন জানান, নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনা দুঃখজনক। প্রশাসনকে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, 'পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দাউদপুর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'
এদিকে সোমবার ভোরে নাটোর সদরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ওরফে শিমুলের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের ঘোড়াগাছা চৌমহনী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
সদর থানার পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘোড়াগাছা চৌমহনী বাজার মোড়ে শামিয়ানা দিয়ে তৈরি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর একটি ক্যাম্প ছিল। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নৌকার কর্মীরা সেখানে নির্বাচনী কাজ করে বাড়িতে যান। ভোর ৫টার দিকে পথচারীরা ক্যাম্পে আগুন জ্বলতে দেখেন। বাজারের নৈশপ্রহরী ঘটনাটি নৌকার কর্মীদের জানালে তারা এসে আগুন নেভান। ততক্ষণে ক্যাম্পের চারপাশ পুড়ে যায়। আগুনে ক্যাম্পে থাকা পস্নাস্টিকের কিছু চেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নৈশপ্রহরী মোসলেম উদ্দিন বলেন, 'তিনি বাজারের অন্য প্রান্তে ছিলেন। হঠাৎ আগুন দেখতে পেয়ে ছুটে আসেন এবং পথচারীদের সঙ্গে নিয়ে আগুন নেভান।'
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, 'আগুনের খবর শুনে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
অন্যদিকে, ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও কুপিয়ে পাঁচজনকে আহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- আশুলিয়ার পূর্ব নরসিংহপুর এলাকার জাহিদ ভূঁইয়া (২৫), রাসেল কমান্ডার (৩২) ও জনি দেওয়ান (৩০)। সোমবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রোববার রাত ১০টার দিকে আশুলিয়ার পূর্ব নরসিংহপুর এলাকায় এই হামলা হলে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মনির হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ আবুল হাসান বলেন, 'খবর পেয়ে রাতেই অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।'