প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ
প্রয়োজনে গানম্যান দেওয়ার পরামর্শ সাধারণ ডায়েরির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে
প্রকাশ | ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গাফফার খান চৌধুরী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কড়া নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। কোনো প্রার্থী নিরাপত্তার বিষয়ে অভিযোগ করলে দ্রম্নত তা আমলে নিতেও বলা হয়েছে। জিডি বা অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক প্রয়োজনে প্রার্থীকে গানম্যান দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। সাধারণ মানুষকে ভোটদান থেকে বিরত রাখতে নানা কৌশলী হামলার ঘটনাও ঘটতে পারে। মূলত নাশকতা চালিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তারই অংশ হিসেবে কোনো কোনো প্রার্থীর উপর হামলা হতে পারে। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলাও হতে পারে কোনো কোনো প্রার্থীকে। যাতে করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা তথ্য মোতাবেক প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিটকে এ সংক্রান্ত কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর নিকটতম কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত জিডি বা মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জিডি বা মামলা দায়ের করার পাশাপাশি অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগ তদন্তের ক্ষেত্রে পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তদন্ত করবে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রার্থী বা প্রয়োজনীয় ব্যক্তি বা নিরাপত্তা চাওয়া ব্যক্তির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে নির্দেশনা রয়েছে। এমনকি কোনো প্রার্থী নিরাপত্তাহীনতায় থাকলে, ওই প্রার্থী যদি বিষয়টি নাও জানেন, তারপরেও তার নিরাপত্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বউদ্যোগে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গানম্যান বা নিরাপত্তারক্ষী দেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে খোদ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল মামুন জানান, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র সম্পর্কে তথ্য আছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা প্রার্থীদের সম্পর্কেও তথ্য আছে। ইতোমধ্যেই ওইসব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের উপর এবং তাদের প্রতিপক্ষের উপর সর্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। কোনো প্রার্থী নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করলে তা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ-২ (হরিণাকুন্ডু) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আশফাক মাহমুদকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের তরফ থেকেই সদর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি করে জিডি হয়েছে। সদর থানার ওসি শাহীন উদ্দীন জানান, যুবলীগ নেতা আশফাক মাহমুদ একটি জিডি করেছেন। সেটি নথিভুক্ত করে তদন্ত করা হচ্ছে। অপর পক্ষের করা জিডিটিও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে।
এছাড়া গত ৩০ ডিসেম্বর টঙ্গীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা ও ট্রাক প্রতীকের সমর্থক?দের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৪ জন আহত হন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত অব্যাহত আছে। দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম।
এছাড়া লালমনিরহাট-২ আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে ভোট বর্জন করে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগে থানায় জিডি হয়েছে। আদিতমারী থানার ওসি মাহমুদ-উন-নবী জানান, দেলোয়ার ও তার পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে অভিযোগটির তদন্ত চলছে।
এছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর নোয়াখালী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোর্শেদ আলমের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বাফুফের ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান ভূইয়া মানিকের কাঁচি প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
গত ২৩ ডিসেম্বর নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর উপজেলা) আসনে নৌকার প্রার্থী ৩ বারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিলের ভাতিজা শিহাব উদ্দিন শাহীনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাংচুর, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে নিবিড় তদন্ত চলছে। কারণ পাল্টাপাল্টি জিডি বা অভিযোগ করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো অপপ্রয়াস আছে কিনা তা জানতেই গভীরভাবে অভিযোগের তদন্ত চলছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তায় থাকছেন ১৫ থেকে ১৭ জন করে নিরাপত্তাকর্মী। কেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রয়োজনে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। সারাদেশে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন।
নির্বাচনী এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড,র্ যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। এবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৯৫ জন। আগামী ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, আনসার,র্ যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে ১ হাজার ৭১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ চেয়েছে সবচেয়ে বেশি ৪৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। যার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬৫ কোটি টাকা।