মেট্রোরেলের সব স্টেশন খুলে দেওয়া হলো
বর্তমানে দিনে ১ লাখ ৩০ থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার পর্যন্ত যাত্রী মেট্রোরেলের ট্রেনে ভ্রমণ করেন বলে জানান মেট্রোরেল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ডিএমটিসিএল
প্রকাশ | ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
বছরের শেষ দিনে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার স্টেশন খুলে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের জন্য। এর মধ্য দিয়ে এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল রুটের ১৬টি স্টেশনের সবগুলোই চালু হলো।
রোববার সকালে এই দুই স্টেশন খুলে দেওয়ার পর থেকেই নিয়মিত যাত্রী ওঠানামা শুরু হয়। এর আগে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিজয় সরণি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন চালু করা হয়। এরপর অপেক্ষায় ছিল মাত্র এই দুটি স্টেশন।
ঢাকা ম্যাসর্ যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিটিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে কাওরানবাজার ও শাহবাগ স্টেশন খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। রাজধানীর ফার্মগেট থেকে শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মো. শাহজাহান জানান, যানজটের হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনি শাহবাগের স্টেশন খোলার অপেক্ষায় ছিলেন।
তার ভাষ্য, 'রাস্তার যানজট আর বাসে ওঠানামায় জীবন দুর্বিষহ ছিল। ভিড়ের কারণে সবসময় বাসে উঠতেও পারতাম না। আজ আমি এই মেট্রোতে উঠে খুব সহজে বারডেম হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরে যাচ্ছি। দেশের এই উন্নয়ন দেখে আনন্দ লাগছে।'
শাহবাগ স্টেশন খোলার দিন গুনছিলেন পরীবাগের বাসিন্দা চিকিৎসক ডা. শুভ্রদেব, তিনি কাজ করেন আগারগাঁওয়ের পঙ্গু হাসপাতালে।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি স্থানে মেট্রোরেল স্টেশন চালু হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলেন, এই দুটি স্টেশন বাণিজ্যিক ও জনবহুল এলাকায় হওয়ায় প্রতিদিন অনেক মানুষ যাতায়াতে সুবিধা পাবেন।
মিরপুর থেকে আসা হাফিজ কাজ করেন বসুন্ধরা শপিং মলের একটি জুতার শোরুমে। তিনি বলেন, 'আমাকে প্রতিদিন কাজের জন্য মার্কেটে আসতে হয়। কারওয়ান বাজার স্টেশন খুলে দেওয়ায় আমার অনেক উপকার হয়েছে। কারণ আমার মিরপুর থেকে সকালে বসুন্ধরা সিটিতে আসতে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেত।'
শাহবাগে আসা এক যাত্রী শরীফ বলেন, 'মেট্রোরেল এমনিতেই আমাদের যাতায়াতের ভোগান্তি অনেক কমিয়ে দিয়েছে। আজ সবগুলো স্টেশন খুলে দেওয়া হয়েছে, এতে আমাদের কষ্ট আরও কমবে। এখন শুধু সময় বাড়ানোর অপেক্ষা।'
মেট্রোরেল লাইন-৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশনগুলো হলো- উত্তরা উত্তর, উত্তরা মধ্য, উত্তরা দক্ষিণ, পলস্নবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় ও মতিঝিল।
এরমধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আপাতত মেট্রোরেল চলাচল করবে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সবগুলো স্টেশনের সময় সমন্বয় করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। তখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলবে শহরের আধুনিক এই গণপরিবহণ।
বর্তমানে দিনে ১ লাখ ৩০ থেকে ১ লাখ ৫৬ হাজার পর্যন্ত যাত্রী মেট্রোরেলের ট্রেনে ভ্রমণ করেন বলে জানান মেট্রোরেল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক।
এদিকে, রোববার সকালে মেট্রোরেলের শাহবাগ স্টেশন চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দর্ যালি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। এতে নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
এ সময় উপাচার্য বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন বলে আমরা মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ পেয়েছি। নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পেয়েছি তার কারণে। এ রকম অসংখ্যা বিস্ময়কর সাফল্য ও অর্জন রয়েছে। এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ভোটারদের নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আবারও শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হবে।'
র্
যালিতে আরও ছিলেন- বিএসএমএমইউ'র উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রমুখ।