সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের

স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাপ দিলে আচরণবিধি ভঙ্গ হবে

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাপ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরাতে গেলে তা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার রাতে ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতির বৈঠক প্রসঙ্গে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, 'স্বতন্ত্র তো স্বতন্ত্রের জায়গায় আছেন। আমি যদি এখন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাপ দিয়ে সরে দাঁড়াতে বলি। তাহলে কি সেটা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হবে না?' ১৪ দলীয় জোটের বেশি আসন চাওয়া কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'অযৌক্তিক বলে কিছু নেই। তারা দাবি করতেই পারে। তারা জোট করে, তারা দল করে, দলের কাছে তো তাদের মর্যাদার একটা ব্যাপার আছে। তারা বিভিন্ন দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা চাইতে পারে। কিন্তু এখানে এডজাস্টমেন্ট করতে হবে। একজনকে আমরা দিলাম কিন্তু সে নট এ ইলেক্টেবল, সেই অবস্থায় একটা সমস্যা হয়ে যাবে। সেখানে অন্য কেউ বেরিয়ে আসতে পারে।' তিনি বলেন, 'এক দলকে চলিস্নশটা দিয়ে দেওয়া যায়, দিলে কী হবে? আমরা খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কথা বলেছি। একটা বিষয়ে লক্ষণীয়, রাজনৈতিক আলোচনাটা বেশি হয়েছে।' কাদের বলেন, 'বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেকে প্রত্যেকের ডিউজ, কী করণীয় এ নিয়ে আলোচনা করেছেন'। আসন ভাগাভাগির প্রসঙ্গে তিনি বলেন 'আমু ভাই (আমির হোসেন আমু) আছেন, উনি বিষয়টি সমন্বয় করছেন।' বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '১৪ দলের সভাপতির কথা তারা শুনতে আগ্রহী ছিলেন। তার কাছে তারা অনেক জাতীয়, আন্তর্জাতিক, ভূ-রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তাদের জানারও আগ্রহ ছিল। জোটের চেয়ারম্যান আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী ভাবছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরের শক্তিরও খেলা আছে। নিশ্চয়ই এখানে প্রত্যেকেরই একটা স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর এখানে এদের মধ্যেই একটা কর্ডিনেশন আছে।' এ বিষয়গুলো তারা সময়ে সময়ে আলাপ আলোচনা করে ব্যালেন্স একটা নীতি গ্রহণ করার বিষয়ে তারা ঐকমত্য পোষণ করেন। নেত্রী এখানে বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরের স্বার্থের যে খেলা বহুদিন আগে থেকে আছে, এ দেশে '৭৫ ঘটে গেছে, ৩ নভেম্বর ঘটেছে। বারবার তো হামলা আসে।' আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমাদের মূল কথা হচ্ছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। সে ব্যাপারে আমরা সবাই একমত।' কয়েক জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এটা কি নতুন কোনো দৃষ্টান্ত? এটা তো প্রায় নির্বাচনেই হয়। তাতে কী ক্ষতি হবে? প্রার্থীরা যদি যৌক্তিকভাবে নির্বাচন কমিশন বাতিল করে, তাহলে আমরা কোনো অজুহাত, আপত্তি করতে যাবো না। শূন্য এবার কোথাও থাকবে না।' নির্বাচন দলের অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এখানে সফট স্টাইল, ফ্রি স্টাইলের বিষয় না। এটা আমাদের ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি। আমাদের চেয়ারম্যান ওপেনলি বলে দিয়েছেন। জোটের চেয়ারম্যান, আমাদের সভাপতি একাধিকবার বলে দিয়েছেন।' জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। আলোচনা চলছে। কথাবার্তা বলেই তো সমাধান করতে হবে।' বৈঠকে ১৪ দল নেতারা সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, '১৪ দলের নেতারা সন্তুষ্ট কি না এ তথ্য নেওয়ার দায়িত্ব সাংবাদিকদের। আমাদের মধ্যে ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই। উই আর হ্যাপি।' '১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ইসি' এদিকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন কমিশন সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি বলে জানান ওবায়দুল কাদের। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনার কথা বলেন। কাদের বলেন, 'আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। এই মানবাধিকার দিবসে আমরা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে একটি বড় সমাবেশ করব, এরকম একটা কর্মসূচি আমাদের ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছিলাম। সে আবেদন তারা গ্রহণ করেননি। বাইরে সমাবেশের নামের শোডাউন হবে সে আশঙ্কা করছে। যে কারণে ১০ তারিখে আমাদের মানবাধিকার দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ভিতরেই পালন করব। বাইরে যে সমাবেশ করার কথা সেটি করছি না। নির্বাচন বিধির বাইরে আমরা যেতে চাই না।' ওবায়দুল কাদের বলেন, 'গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃতু্যবার্ষিকী আজ। তিনি আমাদের গণতন্ত্রের রাজপথের এক অকুতোভয় বীর। গণতন্ত্রই ছিল তার সারা জীবনের ব্রত। গণতন্ত্রের জন্য তিনি লড়াই করেছেন। আন্দোলন করেছেন। পাকিস্তানিদের দ্বারা বারবার নির্বাচিত হয়েছেন, জেলে গেছেন, নিগৃহীত হয়েছেন। গণতন্ত্র বলতে বলতেই বৈরুতে নির্জন হোটেল কক্ষে তার মৃতু্য হয়েছে। আজও রহস্য রয়ে গেছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃতু্য স্বাভাবিক কি না। অনেকে মনে করেন, অস্বাভাবিক অবস্থায় বিদেশের এক হোটেলে নিঃসঙ্গ অবস্থায় তার জীবনাবসান হয়েছে।' আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে আমরা বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম করেছি। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত সেটাও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেটাকে অনুসরণ করেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু নিজেও সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য বলে দাবি করতেন।' বাংলাদেশে 'গণতন্ত্র আছে, গণতন্ত্র থাকবে' মন্তব্য করে কাদের বলেন, 'আমাদের দেশে নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রাণ। এই গণতন্ত্রের জন্যই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আজীবন সাধনা, আমরা তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি। তার প্রদর্শিত পথে আমাদের গণতন্ত্রের সংগ্রাম আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। গণতন্ত্রকে ত্রম্নটিমুক্ত করে পারফেক্ট ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা নিরলসভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লড়াই চালিয়ে যাব। আজকের দিনে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।'