শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরে এইডসে ১৪১ মৃতু্য, নতুন শনাক্ত ৬৫৮

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

চলতি ২০২০ সালে (১ বছর) বাংলাদেশে এইচআইভি (এইডস) আক্রান্ত হয়ে ১৪১ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময় নতুন করে ৬৫৮ জনের শরীরে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বিশ্ব এইডস দিবস-২০২০ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ-এসটিডি কর্মসূচির পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়েছে।

সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, দেশে বর্তমানে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। তবে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র ৮ হাজার ৩৩ জন। এর মধ্যে ১২৪ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আছে। গত এক বছরে নতুন শনাক্ত হয়েছে ৬৫৮ জন। এ সময়ে এইডসে মৃতু্য হয়েছে ১৪১ জনের। দেশে এ রোগে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৮৩ জন মারা গেছে।

তিনি জানান, নতুন আক্রান্ত ৬৫৮ জন পজিটিভ রোগীর মধ্যে পুরুষ ৭৬ শতাংশ, নারী ২১ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ৩ শতাংশ। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২১৮ জন, চট্টগ্রামে ১২৭ জন, খুলনা বিভাগে ৬৪ জন, সিলেট বিভাগে ৪৫ জন, বরিশাল বিভাগে ২৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন ও রংপুর বিভাগে ১৫ জন রয়েছে।

ডা. শামিউল ইসলাম জানান, নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২৫ থেকে ৪৯ বছররের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৪ দশমিক ২০ শতাংশ, ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে দুই দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ৬ থেকে ৯ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। এবং শূন্য থেকে ৫ বছরের মধ্যে এক দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগই বিবাহিত। এদের সংখ্যা ৭০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। অবিবাহিতদের সংখ্যা ২৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।

তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ লাখ। এ বছর করোনার কারণে নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে। এর আগের বছর নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৩৩ লাখের বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখনো সাধারণ জনগণের মধ্যে সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক ০১ শতাংশের নিচে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে সংক্রমণের হার ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা আগে ২৫ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে সারাদেশে ২৩ জেলার ২৮টি হাসপাতালে এইচআইভি টেস্ট চলছে। জিন এক্সপার্ট মেশিন এইচআইভি ভাইরাস শনাক্তে ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর বিশ্ব পরিস্থিতির কথা উলেস্নখ করে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ। মৃতু্য হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার মানুষের। এদের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় এসেছে ২ কোটি ৫০ লাখের কিছু বেশি।

সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, 'এইডস এমন একটি রোগ যে রোগের টিকা এখনো আমরা সফলভাবে আবিষ্কার করতে পারিনি। কাজেই প্রতিরোধটাই এখানে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এ প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনেক প্রোগ্রাম আছে। যেগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। তার মধ্যে সফল একটি প্রোগ্রাম হচ্ছে, এইডস আক্রান্ত মায়েদের নিরাপদ শিশু প্রসব, যার মধ্যে এইচআইভি থাকবে না।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) মো. মোস্তফা কামাল প্রমুখ।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো 'সারা বিশ্বের ঐক্য, এইডস প্রতিরোধে সবাই নেব দায়িত্ব'। ইউএনএইডস, ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেভ দ্য চিলড্রেন ও আইসিডিডিআর,বির সহযোগিতায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ-এসটিডি কর্মসূচি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে