বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেশবপুরে ৫শ' বছর বয়সি গাছটি সংরক্ষণের দাবি

ম তন্ময় মিত্র বাপী, কেশবপুর (যশোর)
  ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ৩০ নভেম্বর ২০২০, ১০:২৭
সাড়ে ৫শ' বছর বয়সি বিরল প্রজাতির তেঁতুলগাছ -যাযাদি

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বিরল প্রজাতির সাড়ে ৫শ' বছর বয়সি বন বিবির মিষ্টি তেঁতুলগাছটি অযত্ন-অবহেলায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার্চনাসহ বহুবিধ গুণের কারণে তেঁতুলগাছটি এলাকায় অলৌকিক গাছ হিসেবে পরিচিত। খাস জমির ওপর অবস্থিত ওই গাছটি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ঐতিহ্যবাহী এই বন বিবির মিষ্টি তেঁতুলগাছটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেশবপুর সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মূলগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার আটঘোরা সড়কের পাশে সরকারি ২০ থেকে ২২ শতক খাস জমির ওপর ঐতিহ্যবাহী বিরল প্রজাতির মিষ্টি তেঁতুল গাছটির অবস্থান। গাছটির নামানুসারে সড়কটি নিলেমালা তেঁতুল তলা সড়ক নামে পরিচিত। অতীতে গাছটি আশপাশের প্রায় ২ বিঘা জায়গা নিয়ে বিস্তৃত ছিল। কিন্তু চারপাশের ভূমিদসু্যরা সরকারি জমি দখল করে ওই স্থানের মাটি কেটে পতিত জমি বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ অব্যাহত রেখেছে। গাছটির ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করায় গত ৯ বছর আগে উপড়ে হপড়েও অলৌকিকভাবে এখনো বেঁচে আছে। শত অত্যাচারের মধ্যেও এবারও গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে ও ধরেছে তেঁতুল। যার স্বাদ মিষ্টি। পতিত হওয়ার পরও গাছটি সজীবতা ফিরে পাচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা বন বিবি নামেখ্যাত তেঁতুলগাছটি দেখতে আসেন। একই সঙ্গে প্রাচীনকাল থেকেই মূলগ্রাম, কোমরপোল, গৌরীপুর, খৈত্রপাড়াসহ দূর-দূরান্তের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ গাছটিকে ঘিরে মানত ও পূজার্চনা করে আসছেন। মূলগ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি দাদাদের মুখে শুনেছেন ত্রিপুরাপুর খেয়াঘাট থেকে একটি নদী মূলগ্রামের ভেতর দিয়ে মধ্যকুল হয়ে কালিগঞ্জ খেয়াঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দিনে একবার পাল তোলা নৌকায় চড়ে মানুষ এ নদী দিয়ে চলাচল করত। নদীর পাড়েই বন বিবির তেঁতুলগাছটি লাগানো ছিল। কালের আবর্তে বর্তমানে সে নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। তার ধারণা, বনের মধ্যেই গাছটি জন্মে ছিল বলে এর নামকরণ হয় বন বিবির তেঁতুলগাছ। একই এলাকার গৌতম দত্তের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, খাস জমি দখল করে একটি দুষ্টচক্র দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছে। দিনে দিনে খাস জমি তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। জমি এবং গাছ রক্ষায় সরকারিভাবে পদক্ষেপ প্রয়োজন। মূলগ্রাম ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিমাই চন্দ্র দাস বলেন, প্রায় ২০ শতক জমির ওপর বনবিবি তেঁতুলগাছ অবস্থিত। কর্মসৃজনের মাধ্যমে ওই এলাকা মাটি দিয়ে ভরাট করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় সম্ভব হয়নি। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে ঠিকভাবে পূজার্চনা করতে ও দর্শনার্থীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে দেখতে পারে তার সুব্যবস্থার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন আলা বলেন, কেশবপুর ও মণিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিল এলাকার মূলগ্রামে সড়কের পাশে থাকা ঐতিহ্যবাহী এ গাছটিকে রক্ষাসহ অরক্ষিত ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হলে এখানে একটি বিনোদনের সুন্দর জায়গা গড়ে তোলা সম্ভব। যে কারণে আমরণ বা চিরজীবী গাছ হিসেবে সরকারিভাবে এর সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইরুফা সুলতানা জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি খোঁজ খবর নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে