শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাবনার নগরবাড়ী নৌবন্দর

উন্মুক্ত বিক্রি হচ্ছে কয়লা ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য-পরিবেশ

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি নৌবন্দরে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কার্গো জাহাজ থেকে কয়লা লোড-আনলোডের কাজ করছেন শ্রমিকরা -যাযাদি

পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি নৌবন্দরে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন শত শত শ্রমিক কার্গো জাহাজ থেকে কয়লা লোড-আনলোডের কাজ করছেন। কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই মাথায় কয়লা বহন করে তারা নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা উন্মুক্ত স্থানে কয়লা স্তূপ করে সংরক্ষণ ও বিক্রয় করায় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে পরিবেশসহ ফসলি জমি। ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নীরবতায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

নগববাড়ী নৌবন্দর এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে কার্গো জাহাজ যোগে এই কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। আর ব্যবসার সঙ্গে সোহেল ট্রেডার্স, আমান ট্রেডার্স, নওয়াপাড়া ট্রেডার্সসহ সাতটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ভাটাতে ইট পোড়াতে কয়লা ব্যবহার করা হয়। প্রতি টন কয়লার মূল্য ৬ হাজার টাকা। এই কয়লা মাথায় করে বহন করে শত শত শ্রমিক। কয়লার গুঁড়ো শ্বাস-প্রশ্বাসে মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে তাদের ফুসফুসে। ফলে তাদের ক্যানসারসহ যক্ষ্ণা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যশোরের নওয়াপাড়া গ্রম্নপ ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে জাহাজযোগে প্রথমে নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। সেখান থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী কয়লা কিনে নগরবাড়ীতে উন্মুক্ত বিক্রি করছে। লোড-আনলোড ছাড়াও স্তূপিকৃত কয়লার গুঁড়ো বাতাসে মিশে পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিতে পড়ছে, এতে ওইসব জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তাছাড়া রোদের তাপে কয়লার স্তূপে আগুনও ধরতেও দেখা গেছে।

কয়লা লোড-আনলোডের সাথে জড়িত একাধিক শ্রমিকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, পেটের তাগিদে বিপদ জেনেও এই কাজ তাদের করতে হচ্ছে। দিন শেষে ৪ থেকে ৫শ' টাকা মজুরি পান তারা। সারাদিন কয়লা টানার পর দিন শেষে নাক মুখ থেকে কয়লার গুঁড়ো বের হয়। কয়লার প্রভাবে তাদের নানা শারীরিক সমস্যা হচ্ছে।

বিষয়ে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কয়লা বহনের ফলে শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধামন্দা, ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্রগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টের পাশাপাশি কাশি শুরু হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেটা যক্ষ্ণায় রূপ ধারণ করে।

নগরবাড়ীর ঘাট এলাকার কয়েকজন কৃষক জানান, কয়লার গুঁড়া ফসলি জমিতে পড়ে মাটি কালো হয়ে যাচ্ছে। এসব জমিতে কোনো ফসলই ভালো হচ্ছে না। আর কিছুদিন গেলে এসব জমিতে ফসল আবাদের আশা ছেড়ে দিতে হবে।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশকর আলী জানান, কয়লার স্তর পড়ে জমিতে ফসল কম গেছে। মাটি ঠিকমত প্রাকৃতিক খাদ্য ও বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করতে পারছে না। তিনি বলেন, জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড হবার পর নির্দিষ্ট স্থানে ঢেকে বিক্রি করলে সবার জন্যই উপকার হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষিত এলাকায় ব্যবসা করা দরকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই প্রশাসনের ভ্রম্নক্ষেপ নেই।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে, কয়েকজন কয়লা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো সনদপত্র আছে কিনা, এমন তথ্য থাকলেও বিষয়ে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, কয়লা আমদানি, রপ্তানি ও বিপণন এবং সংরক্ষণের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে করতে হবে। নগরবাড়ি নৌবন্দর পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, কয়লা ব্যবসায়ীরা উন্মুক্তভাবে কয়লা বিক্রি না করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। তারা যদি এই প্রতিশ্রম্নতি না মানেন তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে