শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকার

গ্রাহক সন্তুষ্টিই আমাদের বড় অর্জন :কাজী ওসমান আলী

কাজী ওসমান আলী। দেশের একজন প্রথিতযশা ব্যাংকার। দ্বিতীয় প্রজন্মের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তার নেতৃত্বে মানবসম্পদ উন্নয়ন, পণ্য বহুমুখীকরণসহ নানাদিক দিয়ে সেরাদের আসনে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। সম্প্রতি ২৫ পেরিয়ে ২৬ বছরে পা রাখল এসআইবিএল। দীর্ঘ পথচলা ও দেশের সার্বিক ব্যাংক খাত নিয়ে যায়যায়দিনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আহমেদ তোফায়েল।
নতুনধারা
  ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

যায়যায়দিন :বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে কেমন চলছে এসআইবিএল?

কাজী ওসমান আলী : আমাদের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বিজ্ঞ ও মানবিক পর্ষদ। তাদের বিচক্ষণ দিক-নির্দেশনায় বর্তমান সংকটময় সময়েও ব্যাংকের বাহুল্য ব্যয় কমিয়ে মুনাফা ঠিক রেখেছি। পরিচালনা পর্ষদ কর্মী-বান্ধব। বৈশ্বিক মহামারির কারণে সৃষ্ট সংকটেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা হ্রাস করা হয়নি। উপরন্তু বোনাস, উৎসব ভাতা, প্রণোদনা ভাতা, ইনক্রিমেন্ট দিয়ে তাদেরকে উজ্জীবিত করে রেখেছেন। সবক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। বেড়েছে শাখা ও গ্রাহক। আন্তর্জাতিক রেটিং প্রতিষ্ঠান মুডিস ব্যাংকের রেটিং করেছে।

যাযাদি :২৫ বছর শেষে এসআইবিএলের অর্জন কি?

কাজী ওসমান আলী :প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর শেষে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা সম্পদের ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। গ্রাহকদের আমানত আছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। সারাদেশে ১৬১টি শাখা, ৫৪টি উপশাখা, ১৩৩টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, ১৪০টি এটিএম বুথ এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা রয়েছে। মোবাইল অ্যাপসহ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকটি গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকসংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকই আমাদের মূলশক্তি। তাদের সন্তুষ্টিই আমাদের বড় অর্জন। আমরা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের জন্য 'প্রবাসী অগ্রযাত্রা' ও 'প্রবাসী উদ্যোগ' নামে দুটি বিশেষ পুনর্বাসন বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করেছি। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের অফশোর ব্যাংকিংয়ের জন্য ১০ কোটি ডলার তহবিলের চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সৌদি আরবে শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছে। জেদ্দা ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক পরিচালিত আওকাফ প্রোপার্টিজে ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছি, যা দিয়ে তারা বিভিন্ন দেশে বড় অবকাঠামো নির্মাণ করবে আর নির্মিত অবকাঠামোর অর্জিত মুনাফা থেকে ব্যাংক পাবে ডিভিডেন্ট।

যাযাদি :এসআইবিএলের 'ইসলামিক মাইক্রো ফাইন্যান্স' কর্মসূচি কেমন চলছে?

কাজী ওসমান আলী :সমাজের বিত্তহীন, নিম্ন ও মাঝারি আয়ের মানুষকে সংগঠিত করে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য আমরা 'ফ্যামিলি এমপাওয়ারমেন্ট ইসলামিক মাইক্রো ফাইন্যান্স' কর্মসূচি চালু করি। কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ ও স্থানীয় পর্যায়ের প্রান্তিক চাষি, ক্ষুদ্র কারিগর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং শিক্ষিত বেকারদের অর্থায়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা কর্মসূচির আওতায় ৩৫ হাজার গ্রাহককে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। আশার কথা হচ্ছে, প্রকল্পে আদায়ের হার ৯৯ শতাংশেরও বেশি। কর্মসূচির আওতায় ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। বর্তমানে ব্যাংকের ৭০টি শাখায় ১০৮ জন সোশ্যাল অফিসার মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত আছেন।

যাযাদি :ব্যাংকের গ্রাহক, কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য আপনার বার্তা কী থাকবে ?

কাজী ওসমান আলী :আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আমানতকারী, গ্রাহক ও শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করা। বৈশ্বিক সংকটে দেশের প্রকৃত উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি যাতে হ্রাস না পায়, বেকারত্ব বৃদ্ধি না পায় সেদিকে এসআইবিএল গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক পুনর্গঠন।

যাযাদি :আগামীতে ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জ কি দেখছেন?

কাজী ওসমান আলী :গত এপ্রিল থেকে বিনিয়োগের মুনাফার হার এক অংকে নামিয়ে এনেছে অনেকে। মুনাফার হার কমার ফলে সাময়িকভাবে ব্যাংকের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি আমানত স্কিমে মুনাফার হার বেশি ছিল। এখন সময় এসেছে তহবিল ব্যবস্থাপনা ভালো করার। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ব্যাংকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

যাযাদি :আগামীতে এসআইবিএলকে কোন উচ্চতায় দেখতে চান?

কাজী ওসমান আলী :আমরা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনকে জোরদার করার লক্ষ্যে আরও কাজ করছি। কিউআর কোড দিয়ে শাখার ক্যাশ কাউন্টার থেকে টাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করছি। যা আগামী মাসেই শুরু হবে। ফলে কাউকে আর চেকবই সঙ্গে বহন করতে হবে না। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশে বসেই মোবাইলে অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা চালু করতে যাচ্ছি। এছাড়া বছরের মধ্যে আরও ২০টি উপশাখা খোলার পরিকল্পনা আছে। সাইবার সিকিউরিটি আরও জোরদার করব। সম্প্রতি আমরা আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স প্রেরণের অনুমোদন পেয়েছি। ফলে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে আউটওয়ার্ড রেমিট্যান্স পাঠানো সম্ভব হবে।

যাযাদি :সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

কাজী ওসমান আলী :যায়যায়দিনকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে