বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

'পাখির জন্য ভালোবাসা' পাঁচ বাগানমালিককে অর্থ বরাদ্দ

ম সোনিয়া বেগম, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ২৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমগাছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি -যাযাদি

বাঘায় খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের সেই আম বাগানের পাখি সুরক্ষায় পাঁচ আম বাগান মালিককে টাকা দিচ্ছে সরকার। কয়েক বছর থেকে শামুকখোল অতিথি পাখি আম বাগানে এসে বাসা বেঁধে থাকায়, ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে পাঁচজন বাগান মালিককে বরাদ্দের এই টাকা দেওয়া হচ্ছে। যেসব গাছে পাখির বাসা রয়েছে ও বাচ্চা হয়েছে ওইসব বাগান মালিক বরাদ্দের টাকা পাবেন। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়রে উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি পত্রে বন অধিদপ্তরের উন্নয়ন খাত থেকে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১ নভেম্বর পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে বন অধিদপ্তরকে খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগানে শামুকখোল পাখির বাসার জন্য আম চাষিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যে পাঁচজন বাগানমালিক বরাদ্দের টাকা পাচ্ছেন, তারা হলেন- খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের মঞ্জুর রহমান, সানার উদ্দিন, সাহাদত হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও ফারুক আনোয়ার।

শনিবার ওই এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন আমবাগান পরিদর্শন করে অর্থ বরাদ্দের কথা জানান, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকার বন সংরক্ষক মিহির কুমার। বাগান মালিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় তিনি জানান, অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই স্থানীয় উপজেলার নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) মাধ্যমে আম বাগানের মালিকদের কাছে এ টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে। আম বাগান পরিদর্শনে তার সঙ্গে ছিলেন, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জিলস্নুর রহমান, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদীজ্জামান, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জার হেলিম রায়হান ও বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর।

জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালের শেষে শামুকখোল পাখিরা বাচ্চা ফোটানোর আগে খোর্দ্দ বাউসার ওই আম বাগানে বাসা বাঁধে। গত বছর অক্টোবরের শেষে পাখিগুলো বাচ্চা ফুটিয়েছিল, কিন্তু বাচ্চা উড়তে শেখেনি। এ অবস্থায় আম বাগানের পরিচর্যা করার জন্য, তারা বাসা ভেঙে আম গাছ খালি করতে চান। একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙেও দেন। স্থানীয় পাখিপ্রেমী কিছু মানুষ, বাচ্চারা উড়তে না শেখা পর্যন্ত বাসা না ভাঙার জন্য বাগান মালিকদের অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে পাখিগুলোকে বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে বাসা না ছাড়লে পাখিদের বাসা ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেন।

বিষয়টি নিয়ে জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এক আদেশে বলেন, কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।

\হঘোষিত আদেশে বলা হয়েছে, এলাকাটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগান মালিক ও বাগানের ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউলস্নাহ সুলতানকে আহবায়ক ও বনবিভাগের পক্ষে সহকারী বনসংরক্ষক মেহেদী হাসানকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সদস্যরা পাখির বাসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮টি আম গাছ চিহ্নিত করে, ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে