শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহে 'কবিরাজদের' দৌরাত্ম্য থামছে না

হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা মানবদেহে বড় ক্ষতির আশঙ্কা চিকিৎসকদের ভ্রান্তি ও অপপ্রচারের প্রতিকার দাবি মানবাধিকার কর্মীদের
ম তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
  ২৩ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করছেন এক কবিরাজ -যাযাদি

ঝিনাইদহে কথিত কবিরাজদের দৌরাত্ম্য থামছে না। ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে জ্বিন তাড়ানো, ক্যানসার, বন্ধ্যাত্বসহ জটিল নানা রোগের চিকিৎসা দেওয়ার নামে তারা প্রতারণা করে চলছে। রোগীদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। কবিরাজদের এমন আজগুবি চিকিৎসায় মানবদেহে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, শরীরে জ্বিনের আবির্ভাব কিংবা কারও সন্তান হচ্ছে না, কেউ প্যারালাইসিস বা ক্যানসার আক্রান্ত- এমন জটিল রোগাক্রান্ত ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকার মানুষ না বুঝে দ্বারস্থ হচ্ছেন কবিরাজের। যেখানে লাঠির মাথায় আগুন ধরিয়ে তাড়ানো হচ্ছে ভূত। পানিপড়া কিংবা শিকড়-বাকলে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। জেলা সদরের পোড়াহাটি, সাধুহাটি, শৈলকুপার ফলিয়া বটতলা, দেবীনগর, মহেশপুরের রামচন্দ্রপুর ও গাড়াবাড়িয়া, নাটিমাসহ প্রতিটি উপজেলাতেই রয়েছে অন্তত অর্ধশত এমন কবিরাজের আস্তানা।

তবে এসব চিকিৎসায় জড়িত কবিরাজদের দাবি, তাদের থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর অনেকেরই সন্তান হয়েছে। অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা তারা করেছেন। যার প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে।

শৈলকুপার এক কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া কয়েকজন রোগী জানান, খুশি হয়ে দুই হাজার টাকা কবিরাজকে তারা দিয়েছেন। যে যা দেয় তাই নেয়, কেউ কেউ ৭ হাজার বা ১০ হাজার টাকা দেয়। শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, অনেক দিন মাথার সমস্যায় ভুগছেন তিনি। তাই তিনি কবিরাজের কাছে গেছেন। আরেক ব্যক্তি জানান, তার নাকে সমস্যার কারণে শৈলকুপার ওই কবিরাজের কাছে গেছেন চিকিৎসা নিতে। তিনি জানান, নাকের মধ্যে মেডিসিন দিয়ে নাক পরিষ্কার করে দিয়েছে। সাত দিনের মধ্যে আলস্নাহ রোগ মুক্তি করবেন বলেও কবিরাজ আশ্বাস দেন।

স্থানীয়রা জানান, 'যশোর মাগুরা কুষ্টিয়া রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত মানুষ এ জেলার কবিরাজদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। তারা ভালো হয় কিনা জানি না। তবে মাঝে মধ্যে শুনি কেউ ভালো হয়েছে আবার কেউ হয়নি।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শৈলকুপার এক কবিরাজ জানান, 'এখানে যারা আসে তাদেরকে আলস্নাহর কালাম আর গাছগাছরা দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন ধরেন, কারও লিভারের সমস্যা হলে আমি চিকিৎসা দেওয়ার পরে তিনি ভালো হয়ে যান। কারও সন্তান হচ্ছে না, চিকিৎসা করার পরে সন্তান হলো। গতকাল আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ছেলে সন্তান হয়েছে এমন এক নারী।

এই কবিরাজের দাবি, 'এখন পর্যন্ত কোনো রোগী বলেনি যে তার থেকে চিকিৎসা নিয়ে উপকার হয়নি। ডাক্তারদের প্রতি তার কোনো ক্ষোভ নেই। তিনি নিজেও ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে যান। দুই দিন আগে শৈলকুপা হাসপাতালের দুই ডাক্তার এসেছিলেন তার কাছে। কবিরাজের কাছে ডাক্তার আসবেন ডাক্তারের কাছে কবিরাজ যাবেন এতে অসুবিধা কী?'

ঝিনাইদহ মানবাধিকার কর্মী শরিফা খাতুন জানান, জেলায় বিভিন্ন সময়ই এমন আজগুবি চিকিৎসার কথা শোনা যায়। কোথাও পানিপড়া কিংবা কলের পানিতে রোগ সারছে এমন। এসব ভ্রান্তি ও অপপ্রচার প্রতিকার প্রয়োজন।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসক ডা. প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ জানান, কবিরাজদের এমন চিকিৎসায় মানুষের শরীরে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে তৈরি হতে পারে জটিল সমস্যা। তাই মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, কবিরাজরা ডাক্তারের সমকক্ষ মনে করে দিনের পর দিন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান পরিচালিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে