স্কুলছাত্রী গণধর্ষণ অবশেষে ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল গ্রেপ্তার

প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
রংপুরের হারাগাছে স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে অভিযুক্ত রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। বুধবার রাতে পুলিশ লাইনে হেফাজত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে আদালতে বিচারকের কাছে দুই আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুর পুলিশ সুপার এ বি এম জাকির হোসেন। তিনি বলেন, স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনায় গত রোববার মামলা হয়। সোমবার বিকালে মামলাটি অধিক তদন্তের স্বার্থে পিবিআই-এ হস্তান্তর করা হয়। বুধবার দুপুরে নির্যাতিতা ওই স্কুলছাত্রী আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে সে রাজু নামের এক পুলিশ সদস্যের কথা বলেছে। ওই রাজুই হচ্ছে মেট্রো ডিবি পুলিশের এএসআই রাহেনুল ইসলাম। তিনি এই মামলার ২নং এজাহারভুক্ত আসামি। রোববার রাতে মামলার পরপরই রাহেনুলকে আটক করে পুলিশ লাইনে হেফাজতে রাখে মেট্রোপলিটন পুলিশ। বুধবার রাতে সেখান থেকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আমাদের হেফাজতে নিয়েছে। তাকে আদালতে হাজির করা হবে। তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবুল কালাম আজাদ ও বাবুল হোসেনকে মঙ্গলবার ভোরে লালমনিরহাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বুধবার বিকালে আদালতে হাজির করা হয়। তারা আদালতের কাছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছে। এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়ার সুমাইয়া পারভীন মেঘলা ও সুরভী আক্তার সম্পা এই গণধর্ষণের ঘটনায় সহযোগী আসামি। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যসহ দুইজন পুলিশ ও দুইজন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার বিবরণ ও তদন্তের সূত্র ধরে এ বি এম জাকির হোসেন বলেন, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে এএসআই রায়হানুল ওই ছাত্রীকে নিয়ে তার পূর্বপরিচিত এজাহারভুক্ত আসামি সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ওরফে আলেয়ার বাড়িতে যায় এবং মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পরে ওই স্কুলছাত্রী রায়হানুলের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলে তার মা বকা দেন। এ কারণে মেয়েটি অভিমান করে ওই দিন রাতে রায়হানুলের কথামতো সে মেঘলার ভাড়া বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে অবস্থানকালে শনিবার রাতে মেঘলা ও সুরভীর সাহায্যে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন বাবুল ও আবুল কালাম আজাদ। এদিকে মামলা সূত্রে জানা যায়, রংপুর মেট্রোপলিটন হারাগাছ থানাধীন ময়নাকুঠি কচুটারি এলাকার দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম। পরিচয়ের সময় রায়হানুল তার ডাক নাম রাজু বলে জানান ওই ছাত্রীকে। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত শনিবার ওই ছাত্রীকে ক্যাদারেরপুল এলাকার এক ভাড়াটিয়া সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ওরফে আলেয়ার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন রায়হানুল। পরে গত শনিবার রাতে ভাড়াটিয়া মেঘলা ও তার সহযোগী সুরভী আক্তারের সহায়তায় আরও দুজন তাকে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে ওই দিন রাত সাড়ে আটটায় পুলিশ মেয়েটিকে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধারসহ মেঘলাকে এবং পরে রাতে আরেক সহযোগী সুরভীকেও আটক করে। এছাড়া ওই রাতেই অসুস্থ ছাত্রীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রোববার রাতে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন আইনে ডিবি পুলিশ সদস্য রায়হানুল ইসলাম ওরফে রাজু ও সুমাইয়া ওরফে মেঘলা ওরফে আলেয়ার নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে হারাগাছ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রম্নত গ্রেপ্তার ও অধিকতর তদন্তের স্বার্থে সোমবার বিকালে মামলাটি হারাগাছ থানা থেকে রংপুর পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়।