বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগ নীতি কঠোর করার পরামর্শ

দেশের সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তটি যুগান্তকারী এবং বিনিয়োগবান্ধব। তারা বলছেন, মুদ্রা-রিজার্ভ অলস ফেলে রেখে কোনো লাভ হয় না। তাই একে কাজে লাগানোটাই ভালো উপায়।

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের পরিমাণ উলেস্নখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু ঘটনা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার কল্যাণে বেড়েছে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ। তার সঙ্গে ছিল বৈদেশিক বাণিজ্যে দেশে মুদ্রা সঞ্চয়ের পক্ষে যায় এমন পরিবেশ। ধীরে ধীরে রপ্তানি কমে আসার অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমদানিও হ্রাস পায়। বিশ্ব-অর্থনীতির মন্দাকালে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান আসা স্বল্পমাত্রায় নেমে এসেছে। তবে কোভিড মহামারি মোকাবিলায় বৈদেশিক সাহায্যের অতিরিক্ত একটি উৎস তৈরি হয়। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধিতে এটাও প্রভাব ফেলে। গত আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৩৯শ' কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের ছিল। তার আগে চলতি ২০২০ সালের মে পর্যন্ত পুরো সময়টা রিজার্ভের অঙ্ক ৩২শ' থেকে ৩৩শ' কোটি ডলারের ঘরে ওঠানামা করেছে। তারপর থেকেই রিজার্ভ বাড়তে থাকে এবং আগস্টে ৬শ' কোটি মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯শ' কোটিতে উন্নীত হয়। ক্রমবর্ধমান রিজার্ভ থেকে এবার উন্নয়নমূলক খাতে খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তটি যুগান্তকারী এবং বিনিয়োগবান্ধব। তারা বলছেন, মুদ্রা-রিজার্ভ অলস ফেলে রেখে কোনো লাভ হয় না। তাই একে কাজে লাগানোটাই ভালো উপায়। বাংলাদেশে উন্নয়ন খাতে দেশের রিজার্ভের অর্থ ব্যবহারের উদ্যোগ এটাই প্রথম। তবে অনেক দেশেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত উন্নয়ন খাতে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ব্যবহার করছে। সহযোগী স্থাপনা এবং বিলাসবহুল আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার ফলে, ব্যাপক সাফল্য পায় আবুধাবির পর্যটন অর্থনীতির উদ্যোগ। ফলে বিশ্বের শীর্ষ বৈদেশিক মজুতগুলোর মধ্যে একটির মালিক এখন আরব আমিরাত। অন্যান্য দেশও সাফল্যটি থেকে উৎসাহী হয়ে নিজ রিজার্ভ থেকে উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ করছে। সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করলে দেশের ব্যবসায়িক খাতও বাড়তি উদ্দীপনা পাবে। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করা হবে-তা নির্ধারণে সরকারকে সতর্ক এবং কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে। খরচেও থাকতে হবে কঠোর জবাবদিহিতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বাছাই করা কিছু উন্নয়ন খাতে এ বিনিয়োগ ভালো ফল দেবে। তারা বলছেন, বর্তমান সরকারের আমলে বিদু্যৎশক্তি উৎপাদন খাতে অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে দেশের শক্তি উৎপাদন খাতের বেশির ভাগ প্রকল্প বিদেশি ঋণ সহায়তায় করা হয়। সরকার এসব ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ করে আসছে এবং ঋণ পরিশোধে কখনো ব্যর্থ হয়নি। কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র ট্যারিফের দিক থেকে সবচেয়ে সস্তা। এগুলো বেজ লোড পস্ন্যান্ট নামে পরিচিত। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দ্রম্নত এবং ধারাবাহিক শিল্পোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের জন্য দরকার কয়লা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদু্যৎ উৎপাদনের সক্ষমতা। দেশের বিদু্যৎশক্তি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এই পরিকল্পনার আওতায় শক্তি উৎপাদনে কয়লার পাশাপাশি এলএনজি, তরল জ্বালানি এবং গ্যাস মিশ্রণ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া, নানা শিল্পাঞ্চলে পরিকল্পিত কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র নির্মাণে দরকার জাপান, চীন এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা। কম খরচে উৎপাদন ছাড়া সস্তা বিদু্যতের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে না এবং একমাত্র কয়লা এই সক্ষমতা দিতে পারে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার যে বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ব্যবসায়ীদের নিঃসন্দেহে উৎসাহিত করবে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঋণদাতারা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও বিনিয়োগের নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণের ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞমহল।