শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে রহস্যঘেরা ঐতিহাসিক বড়দীঘি !

আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
  ২৯ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
শ্রীপুরের গোসিঙ্গা ইউনিয়নের বড়দীঘি -যাযাদি

কয়েকশ' বছরের প্রাচীন রূপকথার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুর গ্রামের বড়দীঘি। ১০৫০ সালে রাজা ইন্দ্রপালের প্রোপৌত্র কর্ণপাল এ দীঘি খনন করেন বলে জানিয়েছেন ঐতিহাসিকরা। কথিত আছে, স্ত্রীকে খুশি করার জন্য এই বিশাল দীঘিটি খনন করেছিলেন রাজা। এক সময় বিয়ে বাড়ির আয়োজনের সোনা ও রূপার থালাসহ রান্না করার পাতিল দীঘিতে ভেসে উঠত! একদিন এক কুচক্রী নারী একটি থালা চুরি করে গরচ্র গোবর রাখার স্থানে লুকিয়ে রাখেন। তারপর থেকে আর এগুলো ভেসে ওঠে না। আরও জনশ্রম্নতি আছে, দীঘিতে একটি বিছানাসহ চৌকিখাট ভেসে উঠত। তবে, একশ বছর ধরে এগুলো আর চোখে পড়ে না বলে জানিয়েছেন দীঘি পাড়ের বাসিন্দারা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দীঘির একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যেন প্রায় অদৃশ্য সীমানা প্রাচীর। বিশেষ কাজে ছোট নৌকায় এক পাড়ের মানুষ অন্য পাড়ে যেতে হয়। কাগজে কলমে বড়দীঘি নামে পরিচিত হলেও মূলত স্থানীয়দের কেউ কেউ জোড়া দীঘি হিসেবেও জানেন এটিকে। কথিত আছে, তৎকালীন রাজার দুই স্ত্রী থাকায় দীঘিটির মাঝখানে একটি দেয়াল দেওয়া হয়েছিল। যা এখনো রয়েছে। দীঘির পাড়ে কালো পাথরে নির্মিত একটি ঘরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে ওই রাজার রানীরা থাকতেন। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে একটি পুরাতন পাথর আকৃতির বস্তু রয়েছে। যাকে ঘিরেই অনেক জল্পনা-কল্পনা। কেননা এ বস্তুর সঠিক পরিমাপ নাকি কেউ নির্ধারণ করতে পারেননি। একেক সময় একেক আকার ধারণ করে থাকে পাথরটি।

উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, এ উপজেলায় ৪৬টি সরকারি খাস পুকুরের মধ্যে আয়তনের দিক থেকে এই দীঘি বৃহত্তম। সরকারি হিসেবে পানির অংশে দীঘির আয়তন ১৬ একর ৮৬ শতাংশ। দীঘির পাড়ের জমি স্থানীয় গুচ্ছ গ্রামের ৩৩ সদস্যের মধ্যে ১৭ শতাংশ হিসেবে জমি বিতরণ করা হয়েছে। আর দীঘির দক্ষিণ পাশেই ১ বিঘা জমিতে রয়েছে গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সব মিলিয়ে দীঘির আয়তন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ বিঘা।

স্থানীয় দফাদার ষাটোর্ধ্ব মহিউদ্দিন জানান, আমার দাদা বলতেন, এলাকায় কারো বিয়ের আয়োজনে পুকুর পাড়ে তার আসবাবপত্র চাওয়া হলে সময় মতোই পেয়ে যেতেন। বিয়ের আয়োজন শেষ হলে সেগুলো আবার পাড়ে রাখলে তা অদৃশ্য হয়ে যেত।

স্থানীয় শতবর্ষী সিরাজ উদ্দিন আকন্দ জানান, কোনো এক সময় বড়দীঘি থেকে পানি উত্তোলন করে আশপাশের লোকজনের চাহিদা পূরণ করা হতো। পানির কোনো দূষণ ছিল না।

দীঘির পশ্চিম পাড়ে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসা ও তৎসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠের মুতাওয়ালিস্ন আব্দুল হেকিম আকন্দ জানান, এ দীঘির অলৌকিক শক্তি বলয়ে মাঠে নামাজের জন্য ব্যবহার করা মাইকের ব্যাটারি অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। একাধিক ব্যাটারি দিয়েও চালিয়ে দেখা গেছে, একই রকম ঘটনা ঘটছে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টির রহস্য উদঘাটনের কৌতূহলে দীঘির পাড়ের মাটির

১৫ ফিট খনন করে শুধু কালো পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে। যা ঘরের ঢালাই আকৃতির বস্তু। যেগুলো দিয়েই রাজা কর্ণপালের বিশাল বাড়ি ছিল। যা মাটির নিচে এখনো রয়েছে।

গোসিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান সরকার জানান, ঐতিহাসিক নানা কারণে কর্ণপুরের এ বড়দীঘি দেখতে আসেন দূরদূরান্তের অনেক পর্যটকরা। এছাড়াও দীঘির বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন ইতিহাস অনুসন্ধানীরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারী যায়যায়দিনকে বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকিয়ে রাখতে দীঘিটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যবান প্রত্নসম্পদ হিসেবেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<117084 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1