শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ চলছে পালস্না দিয়ে

আতিয়ার রহমান, খুলনা
  ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা হচ্ছে -যাযাদি

খুলনার ডিপোগুলোতে ব্যাপকহারে বেড়েছে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ। মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযান চললেও তা থেমে নেই বলে জানা গেছে। খামারিদের থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করে অসাধু ডিপো ব্যবসায়ীরা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ অব্যাহত রেখেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, খুলনার নতুন বাজার ও রূপসা উপজেলায় প্রায় ৫০০ ডিপো রয়েছে। প্রায় প্রতিটি ডিপোতেই সিরিঞ্জের মাধ্যমে বা বিভিন্নভাবে গলদা আর বাগদা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা হয়। অপদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক জেলি, ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারুট, লোহা বা সিসার গুলি, মার্বেল কুচি, ম্যাজিক বলসহ বিভিন্ন পদার্থ। যেগুলো মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

তবে ডিপো মালিকরা বলছেন, কোম্পানির নানা অনিয়মের কারণে লোকসানের হাত থেকে বাঁচতেই তারা এ ধরনের উপায় অব্যাহত রেখেছেন।

চিংড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিংড়ি চাষিরা খামার বা ঘের থেকে মাছ উঠিয়ে ডিপোতে বিক্রি করেন। ডিপো মালিকরা নির্ধারিত বাজারদরে সেগুলো কিনে নেন। চাষিদের থেকে কেজিপ্রতি ১০০ গ্রাম করে বেশি নেন (পাকি) ডিপো মালিকরা। চাষিরা বাকিতে কখনো এসব চিংড়ি বিক্রি করেন না। ডিপো মালিকরা সেগুলো আবার প্রসেস করে অথবা সাধারণ অবস্থায় চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার মালিক বা কোম্পানিতে বিক্রি করেন। তবে ডিপো মালিকরা এসব চিংড়ি কোম্পানির কাছে বাকিতেই বিক্রি করেন। কোম্পানির কাছে বছরের পর বছর বড় অঙ্কের টাকা ফেলে রাখতে বাধ্য হন তারা। বাকি এবং বকেয়ার হিসাব থাকায় ডিপো মালিকরা বেপরোয়াভাবে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে যাচ্ছেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, বকেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু কোম্পানি ওজন পরিমাপ যন্ত্রেও কারচুপি করে থাকে। সেখানে প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম করে বেশি আদায় করে। যার ফলে চাষির কাছ থেকে বেশি নিয়েও ডিপো মালিকরা মালের পরিমাপে সমন্বয় করতে পারেন না। এ সমস্যা এড়াতেই ব্যবসায়ীরা পুশ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এসব অপদ্রব্য পুশ করা চিংড়ি হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি ক্রয় করে থাকে। এছাড়াও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি থাকায় কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী চিংড়িতে পুশ করে লাভবান হতে চাচ্ছে।

এদিকে চলতি মাসের ৮ তারিখে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া বাজার এলাকার দুটি চিংড়ি ডিপোতে অভিযান চালায়র্ যাব-৬। এ সময় অপদ্রব্য পুশ করা ৫০০ কেজি চিংড়ি নষ্ট করের্ যাব। এছাড়া ডিপো মালিকদের মোটা অঙ্কের জরিমানাও করা হয়।

ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্জীব দাশ যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করি। তবে গ্রামাঞ্চলে অভিযান চালালেও অনেক সময় টের পেয়ে ডিপো মালিকরা সেগুলো সরিয়ে ফেলে। ফলে হাতেনাতে ধরা সম্ভব হয় না, তবে এদের ধরতে মাঠে লোক আছে।'

খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে অন্তত ১০০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। প্রায় ২ হাজার কেজি চিংড়ি নষ্ট করা হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে ১০ লাখ টাকার বেশি। এত কিছুর পরও থেমে নেই অপদ্রব্য পুশ। যে কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত চিংড়িশিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। গলদা ও বাগদা চিংড়ি দিন দিন বিদেশের বাজার হারাচ্ছে।

??রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু আহাদ হাফিজ বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরাই এ কাজ করছে। খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা অভিযানে ধরা পড়ছে তারা কেউ স্থায়ী ব্যবসায়ী কি না? কোম্পানিগুলো এসব চিংড়ি নেওয়া বন্ধ করলেই তো অপদ্রব্য পুশ বন্ধ হয়। সেটা তো তারা করছে না।

খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য পরিদর্শক ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, বিদেশের বাজার অব্যাহত রাখতে হলে মানসম্মত চিংড়ি রপ্তানির বিকল্প নেই। পুশবিরোধী আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। আগামীতে কেউ পুশ করা চিংড়িসহ ধরা পড়লে তাকে জরিমানার পাশাপাশি কারাদন্ডও দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শেখ মো. আব্দুল বাকি বলেন, পুশ প্রতিরোধে আমাদের আলাদা টিম কাজ করে। এ ধরনের কর্মকান্ড ধরা পড়লেই মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের খবর দেওয়া হয়। পাশাপাশি এর আর্থিক ক্ষতির দিকগুলোও তুলে ধরে সচেতনও করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116676 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1