অন্যরকম দ্যোতনা তৈরি করছে

মহেষখলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

মিঠু মিয়া, ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার গারো পাহাড়তলির মহেষখলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ -যাযাদি
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার  মধ্যনগর থানার অধীনে গারো পাহাড়তলির একটি এলাকা। ১৯৭১ সালে এখানে ১১নং সেক্টরের ১নং 'মহেষখলা সাব সেক্টরের' প্রধান কার্যালয় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রোজ্বল স্মৃতিধারণকারী এই স্থানে ২০১২-২০১৩ সনে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছিল। সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের যতগুলো স্মৃতিসৌধ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় হলো এটি। স্থপতি রাজন দাশের এই কাজটি সুইজারল্যান্ডের বেসেল শহরের ভুবনবিখ্যাত সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। বাংলাদেশের বিগত দিনের সেরা ৩০টি স্থাপত্যকর্মের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। হাওড়-পাহাড়-নদীসংলগ্ন স্থানে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি পর্যটকদের মনেও অন্যরকম দ্যোতনা তৈরি করছে। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমনের পরিকল্পনায় ছাতকের সন্তান স্থপতি রাজন দাস এই স্মৃতিসৌধটির আকর্ষণীয় নকশা করেছিলেন। দেখতে সেতু বা ঘরের আদল। স্মৃতিসৌধের উপরে ছাদ। দুই দিক খোলা। দুই দিকে দেয়াল। দেয়ালে জুড়ে দেয়া হয়েছে বেশ কিছু জানালা। স্থাপনাটি দেখতে মেঠোরঙা। এখানে ঘুমিয়ে থাকা একাত্তরের শহীদ সেনাদের হাওড় ও বুনো পাহাড়ের নির্মল হাওয়া রাত-দিন যেন মমতায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। স্মৃতিসৌধটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করা যায়। টাইলস বসানো হয়েছে ভেতরের নিচের অংশে। উঠতে-নামতে আকর্ষণীয় সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। রয়েছে কয়েকটি তালগাছ। মাথা উঁচু করে নিয়ত শহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। পূর্ব-পশ্চিম দিকে সমান্তরাল দুটি উঁচু দেয়ালের ৯ ফুট বেদির ওপর দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো। এর পূর্বদিকেই মহেষখলা নদী। উত্তর-দক্ষিণের ২৭ ফুট উঁচু দেয়ালের দুই দিকে প্রায় ২৪টি ছোট-বড় জানালা। হাট করে খোলা থাকে। ১৮ হাজার ৭০০ বর্গফুট জায়গার ওপর নির্মিত স্মৃতিসৌধ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সুনামগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই স্মৃতিসৌধটি প্রসঙ্গে স্থপতি রাজন দাস বলেন, মহেষখলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান। মুক্তিসেনাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই এটা নির্মিত হয়েছে। তাদের স্মৃতি চিরজাগরুক রাখতেই 'সব কটা জানালা খুলে দাও না' ভাবনাটি আমার মাথায় আসে। এই ভাবনা থেকেই আমি বদ্ধ ঘরের বদলে সব সময় আলো-হাওয়া চলাচল করে এমন ভাবনা নিয়েই সৌধটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। তিনি বলেন, আমি জানতে পারি মহেষখলা নদীর পশ্চিমপাড়ের এই স্থানে শহীদ মুক্তিসেনারা ঘুমিয়ে আছেন। ঘুমন্ত এই শহীদ সেনাদের প্রাণের জাগ্রত চেতনার রূপ দিতেই আমি 'আশ্রয়স্থল'-এর মতো স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করি। জুড়ে দেই জানালা। নদীটিও রূপ নেয় রূপকে। পরস্পরে স্বাধীনতার কথা বলা শুরু করে। স্থপতি জানালেন, মাটিরঙা স্থাপনাটি দূর থেকে দেখলে মাটিরই মনে হবে।