সবুজ পাতার ফাঁকে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

আসাদুজ্জামান মিঠু, তানোর (রাজশাহী)
বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষকের ক্ষেতে দুলছে পাকা আমন ধান -যাযাদি
চলতি বছর বর্ষার আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। আগাম বৃষ্টি পেয়ে আমন চাষে মাঠে নেমে পড়েছিলেন কৃষকেরা। তাই এবার একটু আগাম ধান ঘরে উঠবে কৃষকের। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে এখন সবুজ পাতার ফাঁকে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন বাতাসে দুলছে। সোনালি ধানে ধানে ভরে উঠছে মাঠ। সেই সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে এখন সোনালি স্বপ্নের ছড়াছড়ি। বরেন্দ্র এলাকার মাঠগুলোতে যতদূর চোখ যায় চারিদিকে সোনালি ফসলের সমারোহ। চলতি কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা সোনার ধান কাটা শুরু করবেন। অগ্রহায়ণ মাস এলেই পুরোদমে আমন কাটা-মাড়াই শুরু করবে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা। এর আগে আমনের মাঝামাঝি সময়ে নানান রোগবালাই ও ইঁদুরের অত্যাচার এবং শেষ দিকে এসে নিম্নচাপের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আমনক্ষেতের সামান্য ক্ষতি হলেও কৃষি অধিদপ্তর ও কৃষকদের চেষ্টায় সব ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা। এখন ফলন ভালো হবে এমন স্বপ্ন নিয়ে নতুন করে আশাই বুক বেঁধেছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে। চাষাবাদ হয়েছে ৭৩ হাজার ৫২৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে পোকা দমনের পদ্ধতিতে পার্চিং-লগ, লাইন এবং ধৈনচা গাছ লাগানো হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে আরও ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের ওপরে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার শুগনা গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে ১৩ বিঘা জমিতে সাদা স্বর্ণা জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। বর্তমানে তার ক্ষেতের ধানে পাক ধরেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাটা পড়বে। তিনি আরও জানান, পুরো মাঠ এখন সোনালি রঙে সেজেছে। মাঠে গেলে বাতাসের দোলে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে চলতি বছর বেশি ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা জানান, চলতি মৌসুমে ১১ বিঘাতে আমন চাষাবাদ করেছেন। আমনের মাঝামাঝি সময়ে পোকা ও ইঁদুরের অত্যাচার ছিল ও শেষ সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তার আমন ক্ষেতের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবুও সমস্যা নেই, কারণ অন্যসব বছরের চেয়ে এবার আমন ধানের শিষ ভালো আছে ফলে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম জানান, এবার অগ্রিম বৃষ্টি পেয়ে কৃষকরা আগাম আমন রোপণ করেছিলেন। এর জন্য সকল প্রকার কৃষকদের সহযোগিতা করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চলতি মৌসুমে কৃষকেরা স্বর্ণা, একান্ন, ব্রি ধান, ৮৭ ও বিনা ধান ১৭ জাতের আবাদ বেশি করেছেন। এসব ধান পানি সাশ্রয়ী ও উচ্চ ফলনশীল। এখন মাঠে মাঠে ধান পাকা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু কৃষক অল্প পরিসরে ধান কাটাও শুরু করেছেন। অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবার ফলন বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজারে বর্তমানে ধানের দামও ভালো আছে। শেষ পর্যন্ত তা থাকলে কৃষকেরা লাভবান হবেন, হাসি মুখেই থাকবেন।