সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সৈকত পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

সাজাতে কোনো কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। সবকিছু মিলে এ যেন প্রকৃতির এক 'অন্যরকম আশীর্বাদ'। সৈকতের একপাশে সাগরের জলরাশি, অন্যপাশে কেওড়া বন। হাঁটার সময় দেখা মিলবে, সোয়াম্প ফরেস্ট আর ম্যানগ্রোভ বনের অন্যরকম মিলিত রূপ

প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম)
সরু খাল আর সবুজ মাঠে ঘেরা সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালীতে পর্যটকদের মিলনমেলা -যাযাদি
একদিকে দিগন্তজোড়া জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন। আছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। এর মাঝে বয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা নালা। জোয়ারের পানিতে সবুজ ঘাসের ফাঁকে নালাগুলো কানায় কানায় ভরে ওঠে। জোয়ার চলে গেলে ফিরে যায় আগের অবস্থায়। মৃদু বাতাস আর গাছের পাতার ফিসফিসানিতে তপ্ত দুপুর, স্নিগ্ধ বিকাল কিংবা বিষণ্ন্ন সন্ধ্যাটি যে কাউকে রাঙিয়ে তুলবে বর্ণিল আলোকচ্ছটায়। খাল ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য উপভোগের এক অভাবনীয় মুহূর্ত। চোখের সামনে অনন্য সুন্দরের এক সৈকত। নাম তার গুলিয়াখালী সি-বিচ। গুলিয়াখালী বিচকে সাজাতে কোনো কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। সবকিছু মিলে এ যেন প্রকৃতির এক 'অন্যরকম আশীর্বাদ'। সৈকতের একপাশে রয়েছে সাগরের জলরাশি, অন্যপাশে কেওড়া বন। হাঁটার সময় দেখা মিলবে, সোয়াম্প ফরেস্ট আর ম্যানগ্রোভ বনের অন্যরকম মিলিত রূপ। সীতাকুন্ড বাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে সৈকতের অদূরে বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়াতেই চোখ পড়বে কেওড়া বনের ওপর শীতের মায়াবী আকাশ। বেড়িবাঁধ পেরিয়ে জুতাজোড়া হাতে নিয়ে কাদা মাটির ওপর দিয়ে কিছুটা পথ হাঁটার পর কানে ভেসে আসছিল সমুদ্রের গর্জন। সাগরের জলে পা ভেজাতে সৈকতের দিকে এগোতেই দর্শনার্থীদের কোলাহল। দলবল নিয়ে কেউ ফুটবল খেলছে, কেউ গা ভেজাচ্ছে, অনেকেই আবার ব্যস্ত ছবি তুলতে। সৈকতের এক পাশেই রয়েছে বয়ে যাওয়া খাল। সেই খালে নৌকা নিয়ে গোধূলি বেলায় ভাটার অপেক্ষায় মাঝি। সমুদ্রের জলে সূর্যের রক্তিম আভা। জল আর আকাশ মিলেছে সোনালি রঙের ক্যানভাসে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা বা পতেঙ্গার মতো বেশ পরিচিত না হলেও সাম্প্রতিক সময় গুলিয়াখালী সৈকতে ব্যাপকহারে আনাগোনা বাড়ছে পর্যটকদের। সৈকতটির জীবপ্রকৃতির বৈচিত্র্যের অনিন্দ্যরূপই এর কারণ। কেওড়ার শ্বাসমূল যেন ম্যানগ্রোভ বনের মতো। সীতাকুন্ড বাজার থেকে সৈকতের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সাধারণত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এই পথ যেতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। তবে রাস্তা এত সরু যে, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি সিএনজি এক সঙ্গে ক্রস করতে পারে না। যার জন্য দর্শনার্থীদের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয়দেরও। সরু রাস্তাটির কিছু অংশ ইট আর বিটুমিনের হলেও কিছু অংশ এখনো কাঁচা বলা যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গুলিয়াখালী বিচ হতে পারে দেশের পর্যটনের অন্যতম একটি স্থান। আর তা সম্ভব হলে দেশের পর্যটন খাতে অনেক বড় অবদান রাখতে পারবে এটি। মানুষের আনাগোনা কম বলে সৈকতটিতে মিলবে নিরিবিলি পরিবেশও। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই সৈকতে যে কেউ চাইলেই বোটে করে সমুদ্রে ঘুরে আসতে পারেন। সাগরে ঘোরার জন্য রয়েছে অসংখ্য বোট, যা দিয়ে একেবারে সন্দ্বীপ চ্যানেল পর্যন্ত যাওয়া যায়। সন্ধ্যা হলে সোনালি আভায় নীরব-নিস্তব্ধ সমুদ্র, সাগরজলে সূর্যের রক্তিম আভা, হরিণ, শিয়ালসহ দেখা মিলবে হরেক রকমের পশু-পাখিও। চট্টগ্রামের কর্নেলহাট থেকে সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক মানিক দাস বলেন, হৃদয় হরণ করা এমন ভিন্ন আবহের সৈকত আর দেখিনি। সত্যিই ভিন্ন রকম সৌন্দর্য রয়েছে এখানে। গুলিয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, কোনো প্রকার প্রচারণা ছাড়াই এখানে অনেক পর্যটক ছুটে আসছেন। সৈকতটিকে ঘিরে সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের উদ্যোগ নেওয়া হলে এটি হবে দেশের অন্যতম দর্শনীয় ও বিনোদনের ব্যতিক্রমী মাধ্যম। মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহেদ হোসেন নিজামী বলেন, বিচটিতে এখনো লাগেনি কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া। নেওয়া হয়নি কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগও। এরপরও বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে এরই মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেকে ছুটে আসছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গুলিয়াখালী বিচ হতে পারে দেশের পর্যটনের অন্যতম একটি স্থান। যেভাবে যেতে হয় : স্থানীয়রা গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতকে মুরাদপুর বিচ নামে চেনেন। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে উঠে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে। ভাড়া লাগবে ১৫০-২০০ টাকা। সৈকতে কোনো গাড়ির স্ট্যান্ড নেই বিধায় আগেই ফেরার গাড়ির বন্দোবস্ত করে নেওয়া ভালো; এ ক্ষেত্রে রিজার্ভ করে ফেলা অথবা যাওয়ার গাড়ির সঙ্গেই নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত থাকার চুক্তি করা যেতে পারে। থাকা-খাওয়া : গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতের আশপাশে থাকা-খাওয়ার কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। খেতে হলে সীতাকুন্ড বাজারে যেতে হবে। বাজারে মোটামুটি সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। বাজারে কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস আছে।