নেত্রকোনার রাজনীতি

আওয়ামী লীগে গৃহদাহ বিএনপি-জাপা তথৈবচ

৩ মাসের মধ্যে আ'লীগের কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও প্রায় দুই বছরের মাথায় ৭২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

চন্দন চক্রবর্তী, নেত্রকোনা
নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মতিয়র রহমান খানকে সভাপতি এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরুকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেওয়া হয়। ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও প্রায় দুই বছরের মাথায় ৭২ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু নির্বাচিত হয়ে সরকারের প্রথমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তী সময়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু দলের ভেতরে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই কোন্দল রয়েছে। পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে সৃষ্টি হয় সংকট। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের গ্রম্নপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কোন্দলের কারণে উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের ওপর জেলা কমিটির তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। নেত্রকোনা সদর উপজেলা ও পৌর কমিটি প্রায় ২০ বছর আগের। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এমপি বলেন, দলের পদের জন্য নেতাদের স্থানীয়ভাবে প্রতিযোগিতা সব সময়েই থাকে। অচিরেই সম্মেলনের মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আনোয়ারুল হককে আহ্বায়ক এবং কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ড. মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে সদস্যসচিব করে ৬৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে ৮৫ সদস্যবিশিষ্ট এবং পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহাব ভুইয়াকে আহ্বায়ক করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির ১৫টি ইউনিট কমিটির মধ্যে ১০টি ইউনিটের ইতোমধ্যে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিগুলো সংক্ষিপ্ত পরিসরে পালন করছেন। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জেলা কমিটির সদস্যসচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীর বিরুদ্ধে নাশকতা, বিস্ফোরক, পুলিশ এসল্টসহ ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বসহ সারা জেলায় শতাধিক মামলায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল হক বলেন, আমাদের দলীয় কর্মসূচিতে প্রশাসনের অনুমতি পেতে সমস্যা হয়। এ ছাড়াও সরকারি দলের কর্মীরা একের পর এক হামলা করেছে। বিএনপির রাজনীতি তৃণমূল থেকে চাঙা করতে দলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। জেলা জাতীয় পার্টির সর্বশেষ দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী খান সভাপতি এবং মান্নান খান আরজু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেলা জাতীয় পার্টির ১১১ সদস্য বিশিষ্ট, সদর উপজেলায় ৭১ সদস্য এবং ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পৌরসভার পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাপার ইমেজ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১০টি উপজেলায় নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব মান্নান খান আরজু বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো কোন্দল নেই। লাঙ্গলের ভোট বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।