শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

'খাবার দে হামাক খাবার দে'

শহিদুল ইসলাম, রানীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ১৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১৬:০১
পায়ে দড়িবাঁধা মজিবর ফকির -যাযাদি

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ৭নং একডালা ইউনিয়নের শড়িয়া গ্রামের মজিবর ফকিরের সম্পত্তি লিখে নিয়ে পাগল বানিয়ে সন্তানরা পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। গ্রামে তিনি মজি ফকির হিসেবেই পরিচিত। প্রয়োজনমাফিক খাবার, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা-যত্ন না পাওয়ায় এখন মজিবর ফকির মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। লোক দেখলেই বলেন 'খাবার দে হামাক খাবার দে'। খোলা কুঁড়ে ঘরের পাশে টয়লেট-সংলগ্ন একটি চকিতে একপায়ে দাঁড়িনো মজিবরকে বেঁধে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে জানা যায়, শড়িয়া গ্রামের মৃত বয়তুলস্নাহ ফকিরের ছেলে মজিবর ফকির। বয়স ৭৮বছর। দুই বছর আগে স্বাভাবিক ছিলেন তিনি। তখন ছেলেদের কিছু সম্পত্তি লিখে দেন। এরপর কৌশল করে বড় ছেলে আব্দুল খালেক বসতবাড়িসহ অবশিষ্ট সম্পত্তির অধিকাংশ লিখে নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এই বৃদ্ধ। রাস্তায় বের হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করা, দোকানে গিয়ে বিভিন্ন খাবার জিনিস খাওয়াসহ নানাধরনের অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন। একপর্যায়ে কোনোরকমের চিকিৎসা না করেই প্রায় এক বছর ধরে মজিবরের পায়ে দড়ি লাগিয়ে একটি নোংরা খোলা কুঁড়েঘরে বেঁধে রেখেছে তার সন্তানরা। মজিবরের ছোট স্ত্রী ও আশপাশের লোকের দাবি সম্পত্তি লিখে নেওয়া ও দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনমাফিক খাবার, সুচিকিৎসা, সেবা-যত্ন না পাওয়ায় ও দড়িতে বেঁধে রাখার কারণে দিন দিন তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। বড় ছেলে তিন বেলা যে পরিমাণ খাবার দেয় তাতে মজিবরের ক্ষুধা পূরণ হয় না। এই কারণে যে মানুষই তার কাছে যায় তার কাছে খাবার চায়। অভাবের সংসার হওয়ার কারণে মজিবরের ছোট স্ত্রীকে অধিকাংশ সময় মেয়েদের বাড়িতে থাকতে হয়। তখন মজিবরকে দেখার কেউ থাকে না। কুঁড়েঘরেই তাকে মশার কামড়ে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে থাকতে হয়। স্থানীয়রা জানান হয়তো-বা সুচিকিৎসা, ভালো সেবা-যত্ন, পর্যাপ্ত খাবার ও মুক্ত পরিবেশ পেলে বৃদ্ধ মজিবর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। মজিবরকে একবার খাবার দিলে আবার খাবার চায়। কিন্তু সন্তানরা মজিবরের সম্পত্তি লিখে নিয়ে এখন আর বাবাকে ভালোভাবে দেখে না। বাপের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সন্তানরা তাই দড়ি দিয়ে মজিবরকে বেঁধে রেখেছে। বিষয়টি খুবই মানবিক। মজিবরের বড় ছেলে আব্দুল খালেক বলেন, 'স্বজ্ঞান থাকতেই বাপ আমাদের সম্পত্তি দিয়েছেন। আমি বাপকে তিন বেলা খাবার দিই। তবে তার কোনো চিকিৎসা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। অস্বাভাবিক আচরণ করার কারণে পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছি।' মজিবরের দ্বিতীয় স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন, 'বড় ছেলে বসতবাড়িসহ বেশি সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর থেকে স্বামীর মাথার সমস্যা দেখা দেয়। অভাবের সংসার। তাই আমাকে মেয়ে-জামাইয়ের ওপর নির্ভর হয়ে থাকতে হয়। আমি যতটুকু পারি করার চেষ্টা করি। আর টাকা-পয়সার অভাবে চিকিৎসা করা হয়নি। চিকিৎসা, ভালো সেবা-যত্ন, পর্যাপ্ত খাবার পেলে হয়তো আমার স্বামী ভালোও হতে পারেন।' একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল লতিফ বলেন, বিষয়টি তাকে কেউ জানায়নি। তিনি খোঁজখবর নিয়ে স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু করার সুযোগ থাকলে অবশ্যই তা করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ইতিপূর্বেও তারা এরকম একাধিক ব্যক্তিকে সরকারি সহায়তা দিয়েছেন। মজিবর ফকিরের খোঁজখবর নিয়ে দ্রম্নত তার জন্য কিছু করা হবে। সুচিকিৎসা, সেবা-যত্ন, পর্যাপ্ত খাবার পেলে হয়তো-বা বৃদ্ধ মজিবর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে- এমনটিই ধারণা স্থানীয়দের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে