দুদিন থাকতে পারে বৃষ্টিপাত

স্বস্তির বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ

মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর

প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৫৯

ফয়সাল খান
শরতের শেষে সোমবার রাজধানীতে নেমেছিল বর্ষার ঝুমবৃষ্টি। আর এতেই বরাবরের মতোই রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক তলিয়ে যায় পানিতে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। জলাবদ্ধতা পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে গ্রিনরোডে মানুষ এভাবেই ভ্যানে চড়ে বসেন -যাযাদি

ভ্যাপসা গরমের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি দিলেও জলবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া মাত্র আধঘণ্টার বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বৃষ্টি শেষ হওয়ার দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরও কোনো কোনো এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে নিম্নচাপ। মৌসুমি বায়ুও কিছুটা সক্রিয়। এর প্রভাবে দেশের কয়েকটি স্থানে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও দু'দিন থাকতে পারে। তবে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। সোমবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। ঢাকার বাইরে ফেনীতে ২২ মিলিমিটার ও নোয়াখালীর মাইজদীতে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে বৃষ্টিপাতের ফলে সোমবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানি নিষ্কাশনের অধিকাংশ চ্যানেল অকার্যকর হয়ে পড়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন নগরবাসীর অনেকেই। এ কারণেই গতকালের বৃষ্টিতেও অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তারা। এতে চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের মোড়, লালমাটিয়া, আসাদগেট, গ্রিন রোড, সোনারগাঁও মোড়, রামপুরা ও খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা, রাজারবাগ, মগবাজার, মালিবাগ, মতিঝিল, ফকিরাপুল, মিরপুর, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সড়ক উপচে বৃষ্টির পানি ফুটপাত পর্যন্ত চলে আসতে দেখা গেছে। এতে গাড়িগুলোর চলার গতি বিঘ্নিত হয়েছে। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর মিরপুর সড়কে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাছাড়া গ্রিনরোড, পশ্চিম ও পূর্ব রাজাবাজারের বিভিন্ন গলিও পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। এসব সড়কে জমে থাকা হাঁটু সমান পনি আশপাশের দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে ঢুকে গেছে। পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার মুদি দোকানি জাহিদ হাসান জানান, বৃষ্টি হলেই এই গলি পানিতে ডুবে যায়। অনেক সময় দোকানেও পানি ঢুকে যায়। এই গলিতে থাকা সুয়্যারেজ লাইন বেশ কয়েকবার পরিষ্কার করে নতুন পাইপ বসানো হয়েছে। তবে এতে জলাবদ্ধতার কোনো সমাধান হয়নি। কারওয়ানবাজারে কয়েকটি সড়কে দুপুরের পরও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির পানি আর বিকেলে কাদার জন্য লোকজন আসতে পারছেন না। বেচাকেনাও কম। আরেক ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন বলেন, কারওয়ানবাজারে কয়েকটি সড়কে পানি খুব ধীরে ধীরে নামে। জলাবদ্ধতার কারণে বাজার করতে আসা মানুষজন বিপাকে পড়েছে বলে জানান তিনি। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ফটক থেকে ৩০ তলা ভবনের রাস্তায় হাঁটু পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যাংকে আসা বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ দর্শনার্থী। তাছাড়া গুলিস্তান মতিঝিল ও ফকিরাপুলের বিভিন্ন সড়কে জলজট ও যানজটের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে, সোমবার দুপুরের দিকে ঝড়-বৃষ্টিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত ভবনের (৫ নম্বর ভবন) সামনে একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পর গণপূর্ত বিভাগের লোকজন গাছটি কেটে সরিয়ে ফেলে। সকালের তুমুল ঝড়-বৃষ্টিতে বেলা ১২টার দিকে গণপূর্ত ভবনের সামনের বাগানের বিশাল জাকারেন্ডা গাছটি উপড়ে পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে। এতে বাগানের পশ্চিম দিকের রেলিং ঘেঁষে রাখা গাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাছ পড়ে একটি প্রাইভেট কারের সামনের কাচ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। একটি মাইক্রোবাসের উপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া আরও দু'টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৪টি গাড়ির ৩টিই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। অন্যদিকে, সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি গত ২৪ ঘণ্টায় পায়রা থেকে ১১১ কিলোমিটার ও মোংলা থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সরে গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল আছে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মলিস্নক বলেন, নিম্নচাপটি বড়জোর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর যে বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে তাতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।