শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙা নৌকাই সম্বল সংগ্রামী আবেদার

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
নিজের নৌকায় আবেদা বেগম -যাযাদি

সংগ্রামী আবেদা বেগমের একমাত্র সম্বল ছোট একটি ডিঙি। নৌকাটি দিয়ে লোকজন পার করে যা পান তাই দিয়ে কোনোমতে চলে তার সংসার। নৌকাটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার প্রয়োজন পড়লেও অর্থের অভাবে তা পারছেন না। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর কাওয়ালজানি গ্রামের বাসিন্দা আবেদা বেগম (৫৫)। স্বামীর নাম আনছার শেখ (৬৩)। ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক-জননী তারা। পদ্মা নদীর ভাঙনের মুখে থাকায় ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে গত বছর থেকে অন্যের বাড়ির আঙিনায় কোনোমতে মাথা গুঁজে আছেন। সংসারের প্রয়োজনে টানা ২০ বছর ধরে তিনি খেয়া নৌকার মাঝির কাজ করে আসছেন। এতে বছরের ৬-৭ মাস তার মোটামুটি ভালো চললেও বাকি শুকনো সময় তাকে বেকার থাকতে হয়। সরেজমিনে আলাপকালে আবেদা বেগম বলেন, প্রথম দিকে নৌকা চালানো নিয়ে নানাজনে নানা কথা বলত। কিন্তু তাদের কথায় কান দিলে তো আমার সংসার চলত না। খেয়া নৌকা মূলত আমার স্বামীই চালাত। সংসারের প্রয়োজনে আমি নৌকা চালানো শুরু করি আর আমার স্বামী অন্য কাজ করতেন। দুজনের আয়ে মোটামুটিভাবে চলতে থাকে সংসার। এ অবস্থায় একে একে তাদের ৫টি মেয়ে ও সর্বশেষ ১টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ইতোমধ্যে ৪টি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়েটিকে খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছি। এবার সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ছেলেটা ক্লাস ফোরে পড়ে। আবেদা বেগম আরও জানান, গত ২ বছর হলো তার স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে গেছেন। কোনো কাজ করতে পারেন না। তারও আগের মতো শরীর চলে না। দিনে দেড়-দুশো টাকার বেশি আয় করতে পারেন না। নৌকাটাও ভেঙে গেছে। টাকার অভাবে মেরামত করতে পারছেন না। তার উপর ঘাট মালিকের বাৎসরিক টাকার চাপ রয়েছে। তিনি জানান, তারা সরকারি তেমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পান না। নদীভাঙনের মুখে থাকায় অন্যের বাড়িতে কোনোরকমে আশ্রয় নিয়ে আছেন। কিন্তু কেউ খোঁজ নেয় না। এ প্রসঙ্গে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর বয়স পূর্ণ না হওয়ায় ভাতার আওতায় আনা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন জরুরি মুহূর্তে তাদের সরকারি ১০ কেজি করে চাল দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। আগামীতে তাদেরকে মাসিক ভিজিডির খাদ্য সহায়তার আওতায় আনার চেষ্টা করব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে