বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভেঙে গেল গণফোরাম

২৬ ডিসেম্বর কাউন্সিলের ঘোষণা একাংশের
হাসান মোলস্না
  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

বর্ধিত সভা করে দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াসহ ৪ জনকে বহিষ্কারের পাশাপাশি আগামী ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছে গণফোরামের একাংশ। আর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের দাবি এই বর্ধিত সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। দলের শীর্ষ নেতাদের এই বিপরীতমুখী অবস্থানে প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর কার্যত দুই ভাগ হয়ে গেল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। বেরিয়ে যাওয়া অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও জগলুল হায়দার আফ্রিক। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বর্ধিত সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বর্ধিত সভার সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ তাদের নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, দলকে শক্তিশালী, গণমুখী এবং তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ আমাদের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এই জাতীয় কাউন্সিল সফল করার লক্ষ্যে এই সভা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আহ্বায়ক করে জেলা নেতৃবৃন্দসহ ২০১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গণফোরামের একাংশের আয়োজিত বর্ধিত সভা প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, বর্ধিত সভা আয়োজনকারীদের কোনো সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং বৈধতা নেই এই ধরনের সভা করার। এই বৈঠকের সঙ্গে গণফোরামের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি আমাদের দলের কোনো সিদ্ধান্ত না। যেহেতু এটি আমাদের দলের বিষয় না সেজন্য এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। একাংশের আহূত বর্ধিত সভায় বলা হয়েছে আপনাকে কিছু লোক ভুল বুঝাচ্ছেন- এই রকম প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, এসব কথা তারা বলার জন্য বলছে। এটা তাদের একটা কায়দা-কৌশল। এসব বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। এদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এদিকে বর্ধিত সভায় দলের সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক সভার সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত পড়ে শোনান। সর্বসম্মত এই সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র অমান্য করে দলের ঐক্য ও স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহসীন রশিদ, আওম শফিকউলস্নাহ ও মোশতাক আহমেদকে ইতিপূর্বে কেন সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হলে তার কোনো জবাব না দেয়ায় বর্ধিত সভা এই চারজনকে সংশ্লিষ্ট পদসহ সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করেছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে গণফোরামের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল হয় গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে। তিন বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার বিধান থাকলেও একাংশ এক বছরের মাথায় আবার কাউন্সিল আহ্বান করল। জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় আবদুস সালাম হলে টানানো ব্যানারে লেখা ছিল 'অর্থবহ পরিবর্তনের লক্ষ্যে চাই জাতীয় ঐক্য : বর্ধিত সভা : গণফোরাম'। বিগত কমিটির নির্বাহী সভাপতি আবু সাইয়িদের সভাপতিত্বে এই বর্ধিত সভায় জেলা ২৮৩ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন বলে সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়। বর্ধিত সভার মূল মঞ্চে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সাবেক নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, আসাদুজ্জামান, খান সিদ্দিকুর রহমান, আবদুর রায়হান, মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ফজলুল হক সরকার, এম এ মতিন প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন। বর্ধিত সভার ঘোষণাপত্রে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে আছে- মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তোলা, নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা সংশোধন ও কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করা, দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের দ্রম্নত শাস্তির বিধান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরাজমান সর্বনাশা দলীয়করণ উচ্ছেদ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনের দ্বারা জনস্বার্থে পরিচালনা প্রভৃতি। সাবেক নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। গণফোরামকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলি, গণজাগরণ সৃষ্টি করে স্বৈরাচার, দুঃশাসন, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলি। দুইদিন আগেই গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই বর্ধিত সভার সঙ্গে গণফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে বেরিয়ে আসা সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিককে সঙ্গে নিয়ে গণফোরাম গঠন করেন। গত বছরের ৪ এপ্রিল পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পরে ঘোষিত কমিটিতে মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে গণফোরামে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহ্বান নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দাঁড়ায় দুই গ্রম্নপ। রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেন অন্য পক্ষের নেতারা। এক পর্যায়ে রেজা কিবরিয়া চারজনকে বহিষ্কার করেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হাসিব চৌধুরী, খান সিদ্দিকুর রহমান, হেলাল উদ্দিন ও লতিফুর বারী হামিম। সুব্রত চৌধুরীরাও পাল্টা বহিষ্কার করেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির মহসীন রশিদ, আ ও ম শফিকউলস্নাহ ও মোশতাক আহমেদকে। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যে গত ৪ মার্চ গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। তিনি নিজে আহ্বায়ক হয়ে সাধারণ সম্পাদক করেন রেজা কিবরিয়াকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে