শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাকসিন নিয়ে চার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
টিকা নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা

করোনাভাইরাস মহামারি মোকবিলায় কার্যকর এবং নিরাপদ ভ্যাকসিনকেই শেষ ভরসা হিসেবে দেখছে পুরো বিশ্ব। কবে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা না গেলেও ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে সব দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তবে উৎপাদন সক্ষমতা না থাকায় বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী ধনী দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক অনুন্নত দেশগুলোকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। বাংলাদেশও সেই চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভ্যাকসিন বুকিং, ট্রায়াল প্রস্তুতি, ভ্যাকসিন সুবিধা ও বিতরণ ব্যবস্থাপনায় সমতা- এই চারটি চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের জন্য সংকট তৈরি করতে পারে। সে জন্য আগে থেকেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন। মাথাপিছু ভ্যাকসিন বুকিং : করোনাভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। যেটা পেতে ধনী দেশগুলো অগ্রিম ডোজ কিনে রাখছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারের রিপোর্ট বলছে, তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে থাকা একাধিক ভ্যাকসিন উৎপাদনকারীর কাছ থেকে যুক্তরাজ্য নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য মাথাপিছু পাঁচ ডোজ ভ্যাকসিন অগ্রিম বুকিং দিয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ সম্ভাবনাময়ী ভ্যাকসিন মাথাপিছু একের অধিক ডোজ নিশ্চিত করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। নূ্যনতম এক ডোজ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশও। দাতব্য সংস্থা অক্সফামের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলো সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের উৎপাদন সক্ষমতার ৫১ শতাংশই কিনে ফেলেছে। কিন্তু ওই দেশগুলোতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষের বসবাস। ধনী দেশের এই কাড়াকাড়ির কারণে আবিষ্কারে এগিয়ে থাকা পাঁচটি ভ্যাকসিনও যদি সফল হয়, তবুও ২০২২ সালের আগে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬১ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে পারবে না বলে অক্সফাম সতর্ক করেছে। ট্রায়াল প্রস্তুতিতে পিছিয়ে : বিশ্বে এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন ল্যাবে শত শত ভ্যাকসিন গবেষণা হচ্ছে। তবে ৪০টি ভ্যাকসিন রয়েছে হিউম্যান ট্রায়াল পর্যায়ে। ১০টি ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপে বড় জনগোষ্ঠীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, যার মধ্যে চীন ও রাশিয়া পাঁচটি ভ্যাকসিন সীমিত আকারে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। অথচ এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একাধিক ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশ তৎপর রয়েছে। অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। অর্থ বরাদ্দও রাখা হয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ কার্যত ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। কারণ, অনেক দেশই দ্রম্নত নিজ দেশে ভ্যাকসিন ট্রায়াল শুরু করেছে। সেখানে বাংলাদেশে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করায় চীনের ভ্যাকসিন যথাসময় ট্রায়াল শুরু করতে পারেনি। তাই যেকোনো ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ওপর এর ট্রায়াল করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা। কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি বা ভ্যাকসিন সুবিধা : আইসিডিডিআরবির এমিরেটাস বিজ্ঞানী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন-বিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. ফেরদৌসী কাদরী মনে করেন, ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য অনেক প্রতিযোগিতা হবে। এই প্রতিযোগিতার আশঙ্কা করে গ্যাভি, সেপি, ডবিস্নউএইচও কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি তৈরি করেছে। যদিও অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতার মধ্যেই থাকবে। কারণ, ভ্যাকসিনের উৎপাদনতো শতভাগ হবে না। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে প্রচেষ্টা চলছে ২০২১ সালের মধ্যে দুই বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার। এর মধ্যে এক বিলিয়ন ডোজ বরাদ্দ থাকবে ৯২টি নিম্নআয়ের দেশের মানুষের জন্য। এই দেশগুলোয় পৃথিবীর মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বসবাস। বাংলাদেশও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু অতীতে অন্যান্য ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনেক পিছিয়ে থাকতে দেখা গেছে। বিতরণ ব্যবস্থাপনায় সমতা : চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর আগে এত দ্রম্নত কোনো ভ্যাকসিন পৃথিবীতে আসেনি। ফলে ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত, এন্টিবডি পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় কাদের ভ্যাকসিনের দরকার, সেটা নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে কীভাবে এটার বিতরণ ব্যবস্থাপনা করবে, সেটা নিয়ে জটিলতা হতে পারে। ফলে চ্যালেঞ্জ মোকবিলার ব্যাপারে এখনই প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে