শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশ ঘুরিয়েছে জসিমের ভাগ্য

আলতাব হোসেন
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
বাঁশ হাতে হাস্যোজ্জ্বল জসিম উদ্দিন -যাযাদি

কর্মের আশায় ঘুরতে ঘুরতে বয়স বেড়ে চুলে পাক ধরে। নেতা ধরেও কোনো চাকরি মিলেনি তার। মধ্যবয়সি বেকার জসিম উদ্দিনের ইচ্ছা ছিল, বিদেশে গিয়ে সংসারের অভাব-অনটন দূর করার। পরিবারের বেহাল দশা বদলে দেওয়ার। আশা ছিল ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার। সংসারের অভাব-অনটন দূর করতে ঋণ করে বিদেশও গিয়েছিলেন জসিম উদ্দিন। দালাল তাকে বলেছিল, ভালো বেতনে কাজ দেবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তা পাননি তিনি। তিন বছরের মধ্যেই আবুধাবি থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। স্বপ্ন ভেঙে যায়। অধরাই থাকল তার স্বপ্ন-কল্পনা। খালি হাতে দেশে ফিরে আসায় নাখোশ হয় পরিবারের লোকজন। গ্রামে ফিরে আসার পর ঋণের টাকা ফেরত ও ছেলেদের লেখাপড়া কীভাবে চালাবে- এই দুশ্চিন্তায় রাত-দিন একাকার হয়ে ওঠে জসিম উদ্দিনের। বাবার কাছ থেকে পাওয়া সামান্য ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার ঋণ পরিশোধ করেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সত্তার ঘাটের জসিম উদ্দিন। বেকার জসিম উদ্দিন কাজের আশায় চট্টগ্রাম শহরে ঘোরাঘুরি করেন। একটি জুট মিলে সামান্য বেতনে কাজ জুটে তার। চার মাস চাকরির পর এক মাসের বেতন পান জসিম উদ্দিন। পাঁচ মাসের মাথায় জুটমিলটি বন্ধ হয়ে যায়। আবারও খালি হাতে ঘরে ফিরেন। কয়েক মাস বেকার বসে থাকার পর কয়েক জনের পরামর্শে তিনি কিছু বাঁশ কিনে শুরু করেন নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য। এটা-সেটা বানিয়ে বিক্রি করতে থাকেন। এর মধ্যে বাঁশের চাটাইয়ের অর্ডার বেশি আসতে থাকে। জসিম উদ্দিন স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশের ব্যবসাটা আরও বড় করেন। এরপর বাঁশের মাচায় ভাগ্য ফিরেছে তার। মাটির ঘরের জায়গায় তার তিনটি পাকা ঘর উঠেছে। জসিম উদ্দিন নিজে প্রাইমারির গন্ডি না পেরুলেও এখন তার বড় ছেলে ইমতিয়াজ চট্টগ্রাম কলেজে মাস্টার্সে পড়ছে। মেঝ ছেলে মনির উদ্দিন বি অ্যান্ড কলেজে পড়ছে। আর ছোট ছেলে জিয়া উদ্দিন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। বৃদ্ধ মাকে দেখাশোনা করে জসিম উদ্দিনের পরিবার। এখন আর কারও কাছে হাত পাততে হয় না জসিম উদ্দিনের। নেতাদের পিছনে ঘুরতে হয় না তার। বরং তার কাছে নেতারা তোরণ ও প্যান্ডেল তৈরি, শহরের ভবন নির্মাণের জন্য বাঁশের জন্য আসেন। জসিম উদ্দিন বলেন, বিদেশ গিয়ে ভাগ্য ফেরাতে পারিনি। বাঁশ দিতে ও খেতে বাঙালিরা পটু তার সুখ্যাতি আছে বিশ্বে। তারপরও এই বাঁশ আমার ভাগ্য ঘুরিয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাঁশ নিয়ে পড়ে থাকি। ছাগল পালনকারী খামারিদের বাড়িতে গিয়ে মাচা তৈরি করে দিয়ে আসি। ছোট মাচায় খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা আর বড় মাচায় সাত হাজার টাকা। আমি গহিরা থেকে বাঁশ কিনে আনি। আমার সাথে এখন তিনজন শ্রমিক কাজ করেন। সংসার এখন ভালোই চলছে। জসিম উদ্দিন বলেন, গ্রামাঞ্চলে বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লাল-সবুজ পতাকার স্ট্যান্ড বানানো হয় বাঁশ দিয়ে। গৃহনির্মাণ থেকে শুরু করে হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশ বহুল ব্যবহৃত। ঘর, খেতের বেড়া ও খুঁটি, সবজির মাচায় ব্যবহৃত হয় বাঁশ। ছোট খাল পেরুতে লাগে বাঁশের সাঁকো। তোরণ ও প্যান্ডেল তৈরি, শহরের ভবন নির্মাণেও লাগে বাঁশ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে করপোরেট অফিস-সবখানেই নানাভাবে ব্যবহৃত হয় বাঁশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে