বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় সরব আওয়ামী লীগ নীরব বিএনপিসহ অন্যরা

প্রায় ৩০ লাখ জন-অধু্যষিত এই জেলার মানুষ কৃষিনির্ভর। খাদ্য ও মৎস্যসম্পদে উদ্বৃত্ত জেলার মানুষ সহজ সরল ও রাজনীতিসচেতন
রুহুল আমিন, নওগাঁ প্রতিনিধি
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

উত্তরাঞ্চলের ভারতীয় সীমান্তবর্তী একটি জেলা নওগাঁ। খাদ্য ও মৎস্যসম্পদে উদ্বৃত্ত এই জেলার মানুষ যেমন সংবেদনশীল ও সহজ সরল, তেমনি রাজনীতিসচেতনও। প্রায় ৩০ লাখ জন-অধু্যষিত এই জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। একসময় 'মাছে ভাতে বাঙালি' যে প্রবাদ ছিল, তা নওগাঁ জেলার মানুষের জন্য একেবারেই প্রযোজ্য ছিল।

১৯৫২ সালে এ জেলার অনেক মানুষ স্থানীয় এবং জাতীয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে যেমন সম্পৃক্ত হয়েছিলেন তেমনই ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে নওগাঁ জেলায় আওয়ামী লীগের অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় বলে মনে করেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। জেলা ৬টি সংসদীয় আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দলটিকে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে রাখছে। নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাভেদ জাহাঙ্গীর সোহেল জানিয়েছেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী যথারীতি পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে নওগাঁ জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা- সবগুলোতেই নির্বাচিত কার্যকরী কমিটি কার্যকর রয়েছে। এসব কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। নতুন করে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সবগুলো উপজেলার কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিগত বন্যা এবং বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে জেলার কর্মহীন এবং দুস্থ মানুষের পাশে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে নানা কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন নওগাঁ জেলা বিএনপির ঘাঁটি। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু বলেছেন, নওগাঁ জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ১৯৯১ সালে ৩টি আসনে, ১৯৯৬ সালে ৬টি আসনেই এবং ২০০১ সালে ৫টি আসনে বিএনপির প্রার্থীরা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। নওগাঁ জেলায় বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৯ সালে। বর্তমানে নওগাঁ জেলায় বিএনপির তেমন কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে স্বল্প পরিসরে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। অধিকাংশ সময় দলীয় কার্যালয় বন্ধ থাকলেও এসব কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ইতোমধ্যে অতি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পর পর দু'বার জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা দলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান ৪৬ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটির আহ্বায়ক হাফিজার রহমান মাস্টার বলেছেন, সরকারের বাধার মুখে দলীয় কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। জেলার ১১টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভার মধ্যে কেবল মহাদেবপুর উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। বাকি ১০টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভায় কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি নাই। আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম। বর্তমানে একটি সংসদীয় আসনের, একটি উপজেলা পরিষদের এবং একটি ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে। আগামী অক্টোবর মাসের শেষের দিকে জেলার কাউন্সিল অধিবেশন করার পরিকল্পনা নিয়ে দলটি এগিয়ে যাচ্ছে।

জেলায় জাতীয় পার্টির অবস্থান সরব নয়। জাতীয় পার্টির কার্যক্রম এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই দলটি নিয়ে কোনো আলোচনা-সমালোচনা নেই। জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটিরও সহ-সভাপতি। তিনি জানিয়েছেন, এই দলের জেলা সম্মেলন সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে জেলার ১১টি উপজেলা এবং ৩টি পৌরসভার সবগুলোতেই নির্বাচিত কার্যকরী কমিটি রয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতি শনিবার জেলা জাতীয় পার্টির কার্যালয় খোলা হয়। বর্তমানে জেলার একটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। জেলার জাপা সভাপতি জানিয়েছেন সরকারের ভালো কাজের সহযোগিতা আর মন্দ কাজের বিরোধিতা করছে জাপা।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে জেলা জাসদের রাজনৈতিক তেমন কোনো কর্মকান্ড নেই। তিনি জানিয়েছেন, জেলার মহাদেবপুর, ধামইরহাট এবং মান্দা এই ৩টি উপজেলায় জাসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। আত্রাই, রানীনগর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। অন্য উপজেলাগুলোতে কোনো কমিটি নেই। যে কমিটিগুলো রয়েছে সেগুলোর নিয়মিত কোনো সভা হয় না।

নওগাঁ জেলায় জামায়াতের বর্তমানে কোনো কার্যক্রম স্বতন্ত্রভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে না। নওগাঁর পোরশা, নিয়ামতপুর এবং মান্দা উপজেলায় জামায়াতের কিছুটা প্রভাব এক সময় পরিলক্ষিত হতো। জামায়াতের স্বতন্ত্র কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীরা যুক্ত থাকেন। বর্তমানে জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<113067 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1