শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্তির পথে কুষ্টিয়ার তাঁতের গামছা

জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, কুষ্টিয়া
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৪৭
তাঁতে গামছা বুনছেন এক কারিগর -যাযাদি

করোনার কারণে কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলায় তাঁতের গামছাশিল্পের শ্রমিকরা দুর্দিনের মধ্যে দিনযাপন করছেন। অর্থনৈতিক সংকট ও কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তাঁত মালিকরাও রয়েছেন গভীর সংকটে। নানা প্রতিকূলতার কারণে এককালের প্রসিদ্ধ গামছাশিল্পটি আজ বিলুপ্তির পথে। এই শিল্পের সাথে জড়িত শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তবে উপজেলার প্রায় শতাধিক পরিবার এখনো গামছা তৈরি করে কোনোভাবে পুরানো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। কিন্তু নানা সংকটে হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প। জেলার কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, পাংশা, লাঙ্গলবাঁধ, উপজেলায় প্রায় ৮০ হাজারেরও অধিক গামছা তাঁতি ছিল। এর মধ্যে খটখটি তাঁত ১৪ হাজার, হস্তচালিত পিটলং তাঁত ৪৪ হাজার ও বিদু্যৎচালিত তাঁত ২০ হাজার। প্রতি বছর ২৬০ কোটি টাকা মূল্যের কাপড় তৈরি হতো এ জেলায়। ২ কোটি ৮৮ লাখ পিস লুঙ্গি, ১৫ লাখ পিস বেড কভার, ৭২ লাখ পিস গামছা তোয়ালে উৎপাদন হতো। এক সময় এ জেলায় বস্ত্রশিল্পের বার্ষিক আয় ছিল ৩শ কোটি টাকার ওপরে। দেশের মোটা কাপড়ের চাহিদার ৬৩ ভাগ পূরণ করতেন কুষ্টিয়ার তাঁতিরা। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ তাঁত কাপড়ের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে এ চাহিদা কমে ৩৫ ভাগে নেমে এসেছে। সব কিছুর দাম বাড়লেও আশানুরূপ তাঁতবস্ত্রের কোনো দাম না বাড়ায় কুষ্টিয়ার ১ লাখ ১৪ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৫০ হাজার তাঁতশ্রমিক পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখনো পুরানো পেশা হিসেবে এ পেশায় টিকে আছেন কয়েক হাজার তাঁতি। কুষ্টিয়া তাঁত বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় ১৫ হাজার পাওয়ার লুম ও ২ হাজার হ্যান্ডলুমে ১ লাখ ৪০ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এ বিষয়ে গফুর কারিগর জানান, উপজেলাজুড়ে তাঁত পলিস্নগুলো তাঁতের খটখট শব্দে রাত-দিন মুখরিত থাকত, আজ সেখানে সুনসান নীরবতা। তবু বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে কোনোমতে টিকে আছে কয়েকটি পরিবার। গামছাশিল্পের শ্রমিক সাহেব আলী জানান, উপজেলাজুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি এলাকায় তাঁতের গামছা তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিকতার ছোঁয়া ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কুমারখালী ঐহিত্যবাহী তাঁতের গামছাশিল্প। জীবনের শুরু থেকে বাপ-দাদার পেশা এ তাঁত চালিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন কুমারখালী তেবাবাড়িয়ার জাফর শেখ। জাফর শেখের গামছা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। তার অনুপস্থিতিতে ছেলে খোকন শেখ অনেক কষ্টে তাদের পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। জাফর শেখ বড় ছেলে জহুরুল বাবার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুটি তাঁতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, সুতা কিনে বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে নিজেদের তাঁতে সুনিপুণ হাতে গামছা তৈরি হতো তাঁতপলিস্নতে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো এই তাঁতের গামছা। আজ তা কেবলই স্মৃতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে