আওয়ামী লীগে ক্ষোভ, ব্যক্তিনির্ভর বিএনপি, নেতৃত্ব সংকট জাপায়

৩৪১৩ দশমিক ৬৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের টাঙ্গাইল জেলায় ৪০ লাখ ৫ হাজার ৮৩ মানুষের বসবাস

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

মু. জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
আন্দোলন-সংগ্রামে উর্বর টাঙ্গাইলের রাজনীতি চলছে অনেকটা ঢিমেতালে। নির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচির বাইরে কোন রাজনৈতিক দলেরই স্থানীয় সাংগঠনিক কর্মকান্ডের তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের চাওয়া-পাওয়ার ক্ষোভের পাশাপাশি ত্যাগী নেতাকর্মীরা অনেকটা কোণঠাসা ও অবহেলার শিকার। জেলা কার্যালয়বিহীন বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। একসময়ের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী জাতীয় পার্টি এখন পদ-পদবির অন্তর্কোন্দলে জর্জরিত হয়ে অনেকটা নেতৃত্বশূন্য। জামায়াতে ইসলামী জেলা সদরে বরাবরের মতোই নিষ্ক্রিয় থাকলেও মধুপুর-ধনবাড়ীতে নিভৃতে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। ৩৪১৩ দশমিক ৬৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের টাঙ্গাইল জেলায় ৪০ লাখ ৫ হাজার ৮৩ জন মানুষের বসবাস। ৮টি সংসদীয় আসনে জেলায় মোট ভোটার ২৫ লাখ ১৫ হাজার ৩২৭ জন। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি ছাড়া) পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ৪ বার, বিএনপি ৩ বার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ৪ বার বিজয়ী হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার টাঙ্গাইল জেলা বরাবরই রাজনীতি সচেতন। জাতীয় ও স্থানীয় সব আন্দোলন-সংগ্রামে এ জেলা অগ্রগণ্য। জেলার রাজনীতিতে একসময় পরিবারতান্ত্রিক রাজনৈতিক বলয়ে আবর্তিত হতো। স্বাধীনতার পর সিদ্দিকী পরিবার ও পরে খান পরিবারের ছত্রছায়ায় জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত ছিল। বিগত ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের হত্যার পর ২০১৪ সালে এ হত্যাকান্ডে খান পরিবারের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে এবং খান পরিবারের কুশিলবরা পলাতক হন। এরপরই জেলার রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসে। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। ত্যাগী কয়েক নেতা জানান, যারা কোনোদিন 'জয় বাংলা' স্স্নোগান দেয়নি তারাও আজ আওয়ামী লীগের বড় নেতা। দলীয় স্থানীয় দু-একজন এমপির প্রশ্রয়ে একসময় আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলাকারীরাও ব্যাপক দাপট নিয়ে চলাফেরা করেন, আওয়ামী লীগার পরিচয় বহন করেন। কেউ কেউ ভুঁইফোড় সংগঠনের বড় বড় পদ অলঙ্কৃত করেছেন। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে বেশি শক্তিশালী মন্তব্য করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের চাওয়া-পাওয়ার চাহিদা ও ক্ষোভ থাকতে পারে; কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। জেলা বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নেতৃত্বের অন্তঃকোন্দলে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমান লিটন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আহমেদুল হক শাতিল, দেওয়ান শফিকুল ইসলাম লিটন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বপন, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফ পাহেলী, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তারেকুল ইসলাম খান ঝলক তাদের সমর্থিত নেতাকর্মীরা সম্মেলন বয়কট করেন। এ সময় তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর থেকে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মসূচি দুই গ্রম্নপ আলাদাভাবে পালন করে। অন্তঃকোন্দলের কারণে ধীরে ধীরে সাংগঠনিক কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম এক প্রকার ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপন ও হাসানুজ্জামিল শাহীনের নেতৃত্বে পৃথকভাবে দলীয় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্র থেকে 'পকেট কমিটি' ঘোষণা করায় ওই কমিটি বয়কট করা হয়েছে মন্তব্য করে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, আমাদের আন্দোলন বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া কমিটির বিরুদ্ধে। প্রায় তিন বছর হলেও ওই বিতর্কিত কমিটি এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। বিএনপির ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি। বিএনপি একটি বৃহৎ ও গণমানুষের দল মন্তব্য করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, বিএনপি একটি বড় সংগঠন হওয়ায় এখানে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি কেউ কেউ অসুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও লিপ্ত হতে পারে। কিন্তু দলে কোনো অন্তঃকোন্দল নেই। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে টাঙ্গাইলে জাতীয় পার্টিতেও নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। বিগত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জেলা জাতীয় পার্টিতে সৃষ্ট সংকট এখনো রয়ে গেছে। ফলে নির্বাচনই শুধু নয়, সাংগঠনিকভাবেও জাতীয় পার্টি বেকায়দায় পড়েছে। ভোটব্যাংক থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনি ফল ভালো হয়নি। জেলা জাপা অনেকটা নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইলে জাতীয়পার্টির শক্ত অবস্থান রয়েছে মন্তব্য করে জেলা জাপার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবদুস ছালাম চাকলাদার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ও শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কঠোর অবস্থানে থাকায় নির্বাচনি ফল জাতীয় পার্টির পক্ষে যায়নি। জেলা জাপার আহ্বায়ক পীরজাদা শফিউলস্নাহ আল মুনির পারিবারিক একটি মামলায় জেল-হাজতে থাকা এবং পার্টির ত্যাগী নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় থাকায় কর্মসূচি পালনে সমস্যা হচ্ছে। টাঙ্গাইলে জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতা চোখে না পড়লেও জেলায় তাদের নির্দিষ্ট ভোটার রয়েছে। জেলা আমীর আহসান হাবীব মাসুদ ও সেক্রেটারি জেনারেল হুমায়ুন কবীর দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরের সুরুজ রোডে আদর্শ সামাজিক কল্যাণ সংস্থার কার্যালয়টি তারা দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। জেলা আমীর আহসান হাবীব মাসুদের নেতৃত্ব অনলাইন বা মোবাইল কনফারেন্সের মাধ্যমে তারা আলোচনা করে থাকেন। তবে কেন্দ্রের নির্দেশে রাজনৈতিক মিটিং, মিছিল ও পিকেটিং থেকে তারা সরে এসেছেন। জেলা সেক্রেটারি ও বিখ্যাত ২০১ গম্ভুজ মসজিদের মোতওয়ালিস্ন হুমায়ুন কবীর ধর্মীয় কর্মসূচি পরিচালনা করেন। \হ