মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি

ঋণ শোধে লম্বা সময় চান পোশাকশিল্প মালিকরা

যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

রপ্তানি বাড়লেও সরকারের কাছে এখন নতুন দাবি তুলেছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। মহামারির মধ্যে শ্রমিকদের চার মাসের বেতন-ভাতা দিতে সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে নামমাত্র সুদে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, তা পরিশোধে তারা লম্বা সময় চেয়েছেন।

এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই- এই চার মাসের বেতন-ভাতা দিতে সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন পোশাকশিল্প মালিকরা।

শর্ত অনুযায়ী, ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ দুই বছরে ১৮টি সমান কিস্তিতে এই টাকা তাদের ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা এখন ওই অর্থ পরিশোধ করতে পাঁচ বছর সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক নতুন এই দাবির কথা জানিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।

টিপু মুনশি নিজেও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর 'একান্ত সহযোগিতা' ও 'সদয় দৃষ্টি' চেয়েছেন বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সচিব মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পোশাক খাত গভীর সংকটময় সময় পার করছে। এই সংকট উত্তরণের জন্যই ঋণ পরিশোধের সময় পাঁচ বছর করার অনুরোধ করা হয়েছে।'

বিজিএমইএর আবেদনে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, 'এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।'

বিজিএমইএর চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমানে পোশাক খাত 'গভীর সংকটময়' সময় পার করছে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর 'ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া' ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। ক্রেতারা যেসব আদেশ দিচ্ছেন এবং আগের ক্রয়াদেশের বিপরীতে যেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, সেগুলোর অর্থ পেতে ৮ থেকে ৯ মাসের বেশি সময় লাগবে। ফলে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করা 'দুরুহ' হবে।

কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার এ পর্যন্ত ১ লাখ ১১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকার মোট ২০টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

এর মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রথম প্যাকেজটিই ছিল রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন দেওয়ার জন্য। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসের জন্য এ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয় গত ১ এপ্রিল। ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে কারখানার মালিকরা বেতন-মজুরি দেন।

কিন্তু জুন মাসের বেতন-মজুরি দেওয়ার আগেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তখন তহবিলের আকার আরও ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও তিন মাসের (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) বেতন-ভাতা দিতে প্রণোদনা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শিল্প ও সেবা খাতের জন্য যে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করেছিল, সেখান থেকে শুধু জুলাই মাসের বেতন-ভাতা দিতে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। আর সেজন্য ওই তহবিলের আকার ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের জন্য ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে যে চিঠি দিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, শেষবারের মতো জুলাই মাসের মজুরি দিতে এই তহবিল থেকে ঋণ পাবেন পোশাকশিল্প মালিকরা। গত জুনে যেসব উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছিলেন, এর বাইরে নতুন কেউ পাবেন না।

তবে ওই তহবিলের ঋণের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ, যার অর্ধেক বা সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে, বাকিটা ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন।

এরপর তৈরি পোশাক শিল্পের সংকটের কথা তুলে ধরে শ্রমিক-কর্মচারীদের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা দিতে গত ২০ আগস্ট সরকারের কাছে ফের প্রণোদনা চান পোশাক কারখানার মালিকরা। কিন্তু সরকার আর তাতে সাড়া দেয়নি।

ঋণ পরিশোধে সময় বাড়ানোর দাবির বিষয়ে বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'বিজিএমইএর মতো আমরাও মনে করছি, এই চাওয়াটা ন্যায্য।'

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মহামারি ছড়িয়ে পড়লে গত মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল হয় ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। এদিকে দেশেও ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় মাসখানেক কারখানা বন্ধ থাকে।

রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর তথ্য অনুযায়ী, মহামারির ধাক্কায় এপ্রিলে মাত্র ৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের মাসে তা বেড়ে ১২৩ কোটি ডলারে ওঠে। জুনে তা আরও বেড়ে ২২৫ কোটি ডলারে পৌঁছায়।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানি এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে। আগস্টে রপ্তানি হয়েছে ২৪৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পোশাক।

অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) তৈরি পোশাক খাতে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। অর্থাৎ এই দুই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে যে আয় হয়েছে; গত বছরের জুলাই-আগস্ট সময়েও একই আয় হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ। বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<112780 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1