শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সিনহা হত্যা

অবশেষে প্রদীপের দেখা পেল তদন্ত কমিটি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপের দেখা অবশেষে পেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। বুধবার দুপুরের দিকে কক্সবাজার জেলা কারা ফটকে তার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে তদন্ত কমিটি। কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চার দফায় ১৫ দিনের রিমান্ড শেষে প্রদীপ এখন কক্সবাজার কারাগারে আছেন। জেল সুপার বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে আসে। এরপর ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তারা। এর আগে সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থার্ যাব বিভিন্ন সময় ধারাবাহিকভাবে ১৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কারণে ওসি প্রদীপের সাক্ষাৎ পায়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। ফলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বারবার সময় পিছিয়েছে। সর্বশেষ ৩১ আগস্ট তৃতীয়বারের মতো সময়ের আবেদন করে তদন্ত কমিটি। সিনহা হত্যার ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় পেয়েছে বলে এই তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আগে জানিয়েছিলেন। এদিকে, মুছা আকবর (৩৫) ও সাহাব উদ্দীন (৩২)সহ দুই ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৫৩ জনকে আসামি করে একদিনে আরও দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। বুধবার কক্সবাজারে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (টেকনাফ-৩) হেলাল উদ্দীনের আদালতে এই দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। নিহত মুছা আকবরের স্ত্রী শাহেনা আকতার ও সাহাব উদ্দীনের বড় ভাই হাফেজ আহামদ বাদি হয়ে এই দুই মামলার আবেদন করেন। বাদিপক্ষের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। একটি মামলায় হোয়াইক্যং ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে প্রধান ও প্রদীপ কুমার দাশকে ২নং এবং অন্য মামলায় এসআই দীপক বিশ্বাসকে প্রধান এবং ওসি প্রদীপকে ৩নং আসামি করে ২৭ জন ও অপর মামলায় ২৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত মুছা আকবরের মামলা এজাহারে সূত্রে উলেস্নখ করেন, গত ২৭ ফেব্রম্নয়ারি হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাইঙ্গ্যা ঘোনায় মুছা আকবরের বড় ভাই আলী আকবরের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয় দেয় টেকনাফ থানার একদল পুলিশ। এই ঘটনায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। তারই জের ধরে ২৮ মার্চ রাতে মুছাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে থানায় যোগাযোগ করার পর ক্রসফায়ার না দেওয়ার কথা বলে মুছার পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু অসহায় পরিবারটি তিন লাখ দিতে দফারফা করে। কিন্তু ওসি প্রদীপ তিন লাখ টাকা নিয়েও ওই দিন ভোরে মুছা আকবরকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে। বাদিপক্ষের আইনজীবী রিদুয়ান আলী বলেন, এজাহারটি আমলে নিয়ে আদালত অন্য মামলা আছে কি না তা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে নিহত সাহাব উদ্দীনের মামলার এজাহারে বাদি উলেস্নখ করেন, ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল টেকনাফ দুপুরে এসআই দীপক বিশ্বাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাহাব উদ্দীনকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার পরিবার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু অসহায় পরিবার নানানভাবে ধারকর্জ করে ৫০ হাজার টাকা ওসি প্রদীপকে দেয়। কিন্তু আরও সাড়ে চার লাখ টাকা না দেওয়ায় ২০ এপ্রিল রাতে কাঞ্জরপাড়া ধানখেতে ক্রসফায়ারের নামে সাহাব উদ্দীনকে গুলি হত্যা করা হয়। এই মামলা বাদিপক্ষের আইনজীবী বলেন, এজাহারটি আমলে নিয়ে আদালত ওই ঘটনাসংক্রান্ত অন্য মামলা আছে কিনা তা আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে