বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী শহর এখন পাখিরাজ্য

বদরুল হাসান লিটন
  ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
রামেক হাসপাতাল এলাকার গাছে আশ্রয় নেওয়া পাখি -যাযাদি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) ও হাসপাতাল এলাকা। যে দিকে চোখ যায় শুধু পাখি আর পাখি। পাখিদের কিচিরমিচির শুনলে মনে হবে যেন এ এক গহিন অরণ্য। মাথার ওপর উড়ে যাচ্ছে হাজারও শামুক খোল, পানকৌড়ি ও নিশি বক। কেউ ছুটছে খাবার সংগ্রহ করতে, কেউবা গাছের ছোট ছোট ডাল ছিঁড়ে আনছে বাসা বানাতে। আবার কেউবা তৈরি করা বাসায় ও গাছের ডালে বসে আছে। করোনাকালে কোলাহল কম থাকায় পাখিরা শহরের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়েছে। রাজশাহীর পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা ডা. মাহফুজুর রহমান রাজ বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, রাজশাহী টেশনিক্যালি ট্রেনিং সেন্টার ও রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস এলাকায় এমন কোনো গাছ নেই যেখানে পাখিরা এসে বাসা বাঁধেনি। এমনকি, রাস্তার ডিভাইডারের ছোট গাছগুলোতেও বাসা বেঁধেছে হাজারও শামুক খোল পাখি। ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা ছিল পাখিদের অভয়ারণ্য। প্রায় এক যুগ ধরে সেখানেই পাখিরা প্রজনন করে আসছে। কিন্তু তিন বছর আগে কারা প্রাচীরসহ আবাসন নির্মাণের জন্য ছোট বড় প্রায় ৬০০ গাছ কেটে ফেলে কর্তৃপক্ষ। যে কারণে এ বছর কারাগারের আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে গেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকায় পাখিরা ছোট বড় গাছে আশ্রয় নিয়েছে। তিন বছর ধরেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় পাখিরা প্রজনন করছে। তবে এ বছর এখানে পাখির সংখ্যা বেশি বলে জানান তিনি। পাখি বিশেষজ্ঞ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ্‌ রেজা বলেন, এখন এসব পাখির প্রজননের সময়। তাই তারা দলবন্ধভাবে এসব এলাকায় বাসা তৈরি করছে। মূলত করোনাভাইরাসে কারণে কয়েক মাস শহরে কোলাহল কমছিল। এ কারণে পাখিরা শহরের ভিতর ছড়িয়ে পড়েছে। অধ্যাপক আমিনুজ্জামান আরও বলেন, ১৫-২০ বছর আগেও রাজশাহী অঞ্চলে খুব বেশিসংখ্যক শামুক খোল চোখে পরত না। কিন্তু এখন অনেক পাখি এই এলাকায় দলবদ্ধভাবে বাস করছে। তার মতে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি ও পর্যাপ্ত খাবারের উৎস থাকায় প্রায় এক যুগ ধরে শামুখ খোল পাখিরা এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে। এখন এরা বাংলাদেশের আবাসিক পাখি। আগে শুধু গরমকালে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এরা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রজনন করতে আসত বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নওশাদ আলী বলেন, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে আগে থেকেই পাখি আসত। তবে এবার বেশি এসেছে। এখনো পাখি শিকার বা তারা যেন কোনোভাবে বিরক্ত না হয় সে বিষয়টি লক্ষ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে