শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পদ্মায় নৌবন্দর

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ৩০ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীর রূপপুরে পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রপাতি গ্রহণের জন্য পদ্মায় নবনির্মিত নৌবন্দর প্রস্তুত করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে এই প্রকল্পের জন্য নিয়ে আসা ভারী যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নৌপথে গ্রহণের জন্যই এই নৌবন্দর স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণ ও এটি চালুর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এবং জ্বালানি তেল এই বন্দরের মাধ্যমে পৌঁছাবে। রূপপুর পরমাণু বিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সহ-সভাপতি ও পরিচালক এসজি লাসতোচকিন জানান, চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে এই বন্দর দিয়েই বিদু্যৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অংশ যেমন, ভিভিইআর-১২০০ চুলিস্নপাত্র, চারটি স্টিম জেনারেটর ও বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতি উঠানো-নামানোর জন্য পোলার ক্রেন সরবরাহ করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের পরমাণু বিদু্যৎ কেন্দ্রের জন্য যন্ত্র-সরঞ্জামবাহী কার্গো সমুদ্রপথে সেন্ট পিটার্সবার্গ ও নভোরোসিয়েস্ক থেকে বাংলাদেশের মংলা বন্দরে পৌঁছাবে। সেখান থেকে জাহাজে করে নদীপথে পদ্মার নবনির্মিত নৌবন্দরে নেওয়া হবে। নৌবন্দর থেকে নেওয়া হবে পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণস্থলে। পদ্মা নদীর এই বন্দর তৈরিতে সময় লেগেছে দেড় বছর। এর আয়তন ১৫০ী৩৫০ মিটার। বছরের বিভিন্ন মৌসুমে নদীতে পানির গভীরতায় ১০ মিটারের পার্থক্য ধরে বন্দরটি তৈরি হয়েছে। এমনকি শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীতে সর্বোচ্চ পরিমাণে পানি নিচে নেমে গেলেও বন্দরঘাটে সর্বনিম্ন সাড়ে তিন মিটার পানির গভীরতা থাকবে। এই গভীরতায় বছরের সব সময় সেখানে কাজ চলবে। বর্ষা মৌসুমে বন্দরে বড় আকারের জাহাজও ভেড়ানো যাবে। বর্তমানে বন্দরটিতে দুটি ক্রেন রয়েছে যেগুলো ৬৩ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। ৩০৮ টন ধারণ ক্ষমতার আরও দুটি ভারী ক্রেন যুক্ত করা হবে বন্দরটিতে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদু্যৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রাশিয়ার সহায়তায়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন। পারমাণবিক কেন্দ্রের নকশা, পরিকল্পনা, নির্মাণ এবং পরিচালনা থেকে শুরু করে ইউরেনিয়াম মাইনিং, তারপর সেটাকে রূপান্তরিত করে আরও উন্নত করা, পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করা, ব্যবহৃত জ্বালানি রাখা ও পরিবহণ করা, এবং সর্বোপরি নিরাপদ উপায়ে পারমাণবিক বর্জ্যের নিষ্পত্তির মতো কাজগুলো করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম। দুটি ইউনিট মিলিয়ে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এই প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া ৪ শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা। ১৯৬১ সালে পদ্মা নদীর তীরে রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা প্রকল্পের রূপ দিতে অর্ধ শতক পার হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ প্রকল্পে গতি আসে, চুক্তি হয় রাশিয়ার সঙ্গে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রের কারিগরি গবেষণার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার একটি চুক্তি হয়। ওই বছরই অক্টোবরে রূপপুরে ভিত্তি স্থাপন হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'সেফটি ফাস্ট'কে গুরুত্ব দিয়ে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে রূপপুরের বিদু্যৎ কেন্দ্র। ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় জ্বালানি সরিয়ে নিতেও ইতোমধ্যে রাশিয়া বাংলাদেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বেশ কয়েকটি 'মেগা প্রকল্পের' অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলেও রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদু্যৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ৩০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে বিদেশি জনবল আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে