বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
পরীক্ষা দিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা -ফাইল ছবি

স্কুল বন্ধ বলে চতুর্থ শ্রেণির সাকিয়া করিম রাকা ঘরবন্দি প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস। ঢাকার মালিবাগে যে স্কুলে সে পড়ে, তার শিক্ষকরা জুন মাসে অনলাইনে ক্লাস নিয়েছিলেন কয়েক দিন। কিন্তু নানা জটিলতায় তা বেশিদিন চলেনি। বছর শেষ হতে বাকি আর চার মাস, এখন রাকার পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার কী হবে? ওকে কি বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হবে? বছরের অর্ধেকই যেখানে ক্লাস হলো না, বাসায় বসে থেকে পড়ালেখাও সেভাবে হলো না, ও পরীক্ষা দেবে কীভাবে? করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে রাকার বাবা-মায়ের মতোই উদ্বিগ্ন প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। বাচ্চাদের পড়ালেখায় দীর্ঘ বিরতি পড়ায় পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষাবর্ষ শেষ করে দেওয়ার কথা বলছেন তাদের কেউ কেউ। আবার কেউ বলছেন সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে পরীক্ষা নেওয়া কিংবা শিক্ষাবর্ষ বাড়ানোর কথা। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনিশ্চয়তায় না রেখে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ আছে সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সেই ছুটি অন্তত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে বলে সরকার জানিয়েছে। তারপর যদি স্কুল খোলাও যায়, বছরের বাকি থাকবে তিন মাস। পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এবার কেন্দ্রীয়ভাবে না নিয়ে স্কুলে স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষই নেবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন। গত ২৫ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের জন্য তিনটি পাঠ পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ)। এখন সেপ্টেম্বরে যেহেতু স্কুল খুলছে না, অক্টোবর ও নভেম্বর সামনে রেখে যে পাঠ পরিকল্পনা হয়েছে, তার ভিত্তিতে প্রতিটি স্কুল প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্র করে পরীক্ষা নেবে। কিন্তু অভিভাবকদের মতো স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষও রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। তারা বলছেন, সরকারের নির্দেশনা পেলে স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের তারা সব জানিয়ে দেবেন। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, অনলাইনে ক্লাস করে পড়া ১ বুঝতে ছেলেমেয়েদের সমস্যা হচ্ছে। বনশ্রীর কসমো স্কুলের ইংরেজি ভার্সনে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে ইয়াসিন আহমেদ। তার মা সালমা আহমেদ হীরা জানান, স্কুল থেকে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। তিনি জানান, 'ইংরেজি ভার্সনে বোঝানোটা খুব কঠিন। সব বাবা-মায়ের পক্ষে বাচ্চাদের সেটা ঘরে পড়ানো সম্ভব না। আর এই সময়টায় বাসায় গৃহশিক্ষকও আনা যায় না। ফলে বাচ্চাদের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। আমার উদ্বেগের একটা বড় কারণ হলো, আমার ছেলেটার যে বেইজটা তৈরি হতো, তার ৫০ শতাংশও তৈরি হবে কিনা জানি না। এই বছরটায় তো সমস্যা হবেই।' সালমা আহমেদ হীরা নিজে শান্তিনগরের গোল্ডেন এরা কিডস স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার মতে, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আসতে যত দেরি হবে, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি তত বাড়বে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যা জানানো হচ্ছে, তাতে আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। কখনো বলা হচ্ছে পরীক্ষা হবে, কখনো বলা হচ্ছে নাও হতে পারে। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। বাচ্চাদের একটা পরীক্ষা তো নিতে হবে, সেটা কীভাবে হবে, সেটার সিলেবাস কেমন হবে, সেইভাবে কিন্তু আমাদের নির্দেশনা দেওয়া দরকার। স্কুলগুলো যে যার মতো পড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এটা তো ঠিক হচ্ছে না। এখন এই পরিস্থিতিতে আমাদের একটা গাইডলাইন দরকার, সেটা দিতে পারে আমাদের সরকার। মহামারির এই সময়ে ঘরবন্দি শিশুদের অনলাইনে ক্লাসের ফাঁকে মোবাইল আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে বলেও শঙ্কিত হীরা। সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মালিবাগ শাখার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তামিমের মা নূরজাহান বেগম শিলা জানান, অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা সবই চলছে, কিন্তু এই বছরটায় তার ছেলের মতো সবাইকেই যে 'পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে' তা তিনি বেশ বুঝতে পারছেন। তিনি জানান, সরাসরি যেভাবে পড়ালেখাটা হয়, সেটা তো অনলাইনে সম্ভব হচ্ছে না। ইন্টারনেটের সমস্যা থাকে অনেক সময়, আবার কোনো প্রশ্ন থাকলে সেটাও জানা সম্ভব হচ্ছে না। যতটুকু পারছি, বাসায় পড়ানোর চেষ্টা করছি। অভিভাবকদের উদ্বেগ আর প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া রেজওয়ান বলেছেন, বার্ষিক পরীক্ষার 'এখনো অনেক দেরি' আছে, তাই কোনো সিদ্ধান্ত তারা এখনো নেননি। তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনাও আমরা পাইনি, আমরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি, শিট দিচ্ছি। সিলেবাস নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের, বোর্ড বা সরকারের। আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। সেপ্টেম্বরে ভিকারুননিসায় প্রথম থেকে নবম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক এবং দশম শ্রেণির প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও স্কুল খোলার অনুমতি না মেলায় তা বাতিল করা হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ। সরকারি ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভূঁইয়া জানান, পঞ্চম শ্রেণি থেকে অনলাইনে ক্লাস নিলেও প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে তা নিচ্ছেন না তারা। তিনি বলেন, অভিভাবকদের সঙ্গে আমাদের প্রায়ই যোগাযোগ হচ্ছে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ছোট। ডিভাইসের প্রতি তাদের আসক্তি তৈরি বা অনলাইনে ক্লাস করাটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে বলে আমরা অনলাইনে ক্লাস নিইনি। অভিভাবকদের বলেছি, তারা যেন সিলেবাস অনুযায়ী বাসাতেই পড়ান। বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি জানিয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, এ ব্যাপারে তো সিদ্ধান্ত নেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিলেবাস ঠিক করে দিব। কিছু স্কুল আবার প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে সিলেবাস শেষ করে দিচ্ছে। ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম সাময়িকের প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা ও দ্বিতীয় সাময়িকের মডেল টেস্টও নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান মোলস্না। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রতিটি শ্রেণির মূল টপিকগুলো বাছাই করে তা অনলাইনে দিয়ে দিয়েছি ক্লাস করার জন্য। আশা করছি আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই বার্ষিক পরীক্ষা হবে, যদি নেওয়ার সুযোগ থাকে। আর যদি পারা যায়, আমরা অনলাইনে নেব। বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে