শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহের পাটের জুতা ইউরোপ-আমেরিকায়

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
  ৩০ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
জুতা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

বাংলাদেশের 'সোনালি আঁশ' খ্যাত পণ্যের কদর পুরো পৃথিবীতেই লক্ষ করার মতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাটজাত পণ্যের প্রতি নাগরিকদের দুর্বলতা দেখা যায়। পরিবেশবান্ধব পৃথিবী গড়ার কারিগররা মনে করছেন, পাটপণ্য মানবজীবনে অত্যাবশ্যক হওয়া দরকার। বাংলাদেশে পাট নিয়ে গবেষণা এবং এর নানামুখী ব্যবহারের কথা আমাদের জানা। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের তৈরি পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই করে নিচ্ছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে তৈরি পাটের জুতা এখন বাংলাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাহিদা অর্জন করছে। ২০১৭ সাল থেকে এখানকার উৎপাদিত পাটের জুতা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হচ্ছে। অ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেডের পরিবেশবান্ধব এ পাটের জুতা তৈরিতে স্থানীয় প্রায় ৪০০ নারী সম্পৃক্ত রয়েছেন। এসব নারীর অধিকাংশই গৃহিণী। বাড়ির কাজের পাশাপাশি তারা হাতে পাটের জুতা তৈরির কাজ করছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের বাড়তি আয় সংসারে সচ্ছলতা আনছে। দেশে যখন পাটের কারখানাগুলো প্রায় বন্ধ, তখন সংকটে থাকা দেশীয় এ সম্পদকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে মফস্বলের একটি গ্রামে পাট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পায়ের ব্যবহার উপযোগী জুতা। এখানে তৈরি জুতা ফ্রান্স, প্যারিস, জার্মানি, ইতালি, স্পেনসহ চীন ও জাপানেও রপ্তানি করা হচ্ছে। খুব অল্প সময়ে হাতে তৈরি এই জুতার ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এর পেছনে থাকা মানুষটি হলেন ওবাইদুল হক খান। অ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবাইদুল হক রাসেল টগবগে এক যুবক। চোখেমুখে স্বপ্ন নতুন কিছু করার। ব্যতিক্রমী কোনো কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজের ভাগ্য বদলাতে চান তিনি। তাই মফস্বলেই গড়ে তুলেছেন এই জুতার কারখানা। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ পৌর শহরের দক্ষিণ আড়পাড়ায় তার বাড়ি। আর প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে। পড়াশোনা শেষ করে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঢাকায় প্রথম গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ২০১৬ সালের দিকে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান এবং দেশের পাটশিল্পকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার আগ্রহ জাগে তার ভেতরে। শুরু করেন পাট দিয়ে জুতা তৈরির কাজ। কালীগঞ্জ উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের রঘুনাথপুর বাজারের পাশে ৪৪ শতক জমি কিনে পাটের জুতা তৈরির কারখানা তৈরি করেন। দেশ এবং বিদেশ থেকে কিছু মেশিন সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন পাটের কারখানা থেকে কাঁচামাল ক্রয় করে এনে এখানে পাটের জুতা তৈরি শুরু করেন। তার উৎপাদিত পাটের জুতা এখন ইউরোপ, আমেরিকাসহ চীন এবং জাপানে রপ্তানি করা হচ্ছে। কারখানায় রয়েছে ৮০ জন নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী। কর্মরত নারীরা বাড়িতে বসে কাজ করেন। তাদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ দেওয়া হয়। প্রতি জোড়া জুতার জন্য তারা বিল পেয়ে থাকেন। একেকজন নারী বাড়ির অন্য কাজের পাশাপাশি হাতে এই জুতা তৈরি করে মাসে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। এখানকার তৈরি জুতা ২ থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত রেটে বিক্রি করেন। ওবাইদুল হক রাসেল জানান, তার কারখানায় উৎপাদিত পাটের জুতা দিয়ে প্যারিসে কয়েকটি ফ্যাশন শো হয়েছে। তিনি বলেন, নিজেই এই জুতার মার্কেটিং করেন। বায়ারদের সাথে কথা বলেন এবং রপ্তানি করেন। পাটের জুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উন্নত বিশ্বে- যোগ করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। অ্যামাস ফুটওয়ারের ম্যানেজার মাসুদ রানা জানান, কারখানায় ৬টি ধাপে একটি জুতা তৈরি করা হয়। সোল্ড তৈরি হয় রাবার দিয়ে। জুতার বাকি অংশ তৈরি হয় পাট দিয়ে। আর এই কাজগুলো সম্পূর্ণ হাতের মাধ্যমে করা হয়। প্রতি মাসে তাদের কারখানা থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার জুতা রপ্তানি করা হচ্ছে। এই জুতার বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারের পরে ফেলে রাখলে এটি মাটির সাথে মিশে যায়। ফলে এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে