বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
চামড়ার দাম নির্ধারণী বৈঠক

আজ সীমিত পর্যায়ে রপ্তানির ঘোষণা আসতে পারে

হাসান আরিফ
  ২৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০
স্তূপ করে রাখা কোরবানি পশুর চামড়া -ফাইল ছবি

আজ কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণের ঘোষণা দেবে সরকার। চামড়া সম্পদ রক্ষায় একই সঙ্গে সীমিত পর্যায়ে কাঁচা চামড়া রপ্তানির ঘোষণা দিতে পারে সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে খুশি হয়েছে লালবাগের পোস্তার আড়তদার সমিতি বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। ১৯৯০ সাল থেকে ওয়েট বস্নম্ন লেদার (কাঁচা চামড়া) রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকেই চামড়া শিল্পে দুরবস্থা তৈরি হয়। জানা গেছে, তিন দশক ধরে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ বন্ধ রয়েছে, সম্প্রতি তা খুলে দেয়ার সুপারিশ করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলেছে, এবার ঈদুল আজহায় পশুর কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে নূ্যনতম দাম নির্ধারণ করে রপ্তানির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। জানা গেছে, বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের থেকেও এবার চামড়ার দাম আরও কমে নির্ধারণ করা হবে। এরই মধ্যে ট্যারিফ কমিশন তাদের সুপারিশে চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করার জন্য বলেছে। এবার কমিশন প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া ছাগলের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে। গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া ছাগলের চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা। সরকার নির্ধারিত এই দাম অনুযায়ী, ৩০ থেকে ৩৫ বর্গফুটের বড় আকারের গরুর চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছিল দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। আর ১৫ থেকে ২৫ বর্গফুটের ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কিন্তু গড়ে প্রতিটি চামড়ার দাম ছিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। ফলে কোরবানি দাতারা চামড়া বিক্রি না করে তা নষ্ট করে ফেলেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও চামড়ার দাম না পাওয়ায় তা ফেলে দিয়েছিল। চামড়ার দাম নির্ধারণে কমিশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, চামড়া দিয়ে যেসব পণ্য তৈরি হতো, সেখানে এখন সিনথেটিক বস্ত্র ও কৃত্রিম চামড়ার ব্যবহার বেড়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী চামড়ার দাম কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ সেন্ট থেকে দেড় মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম দাঁড়ায় ৪৩ থেকে ১২৯ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর কোরবানি পশুর চামড়ার নজিরবিহীন দর বিপর্যয়ের পর কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। তবে এবার যেন কিছুটা দাম পাওয়া যায়, সেজন্য হয়তো ওয়েট-বস্নম্ন লেদার (কাঁচা চামড়া) রপ্তানির অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ রোববার চামড়াশিল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিতে পারেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আর কী পরিমাণ ও কী ধরনের চামড়া রপ্তানি করার অনুমতি দেওয়া হবে সে সবও ঠিক করে দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে গতবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি। গরিব ও এতিমদের হক চামড়ার দাম নিয়ে গত বছরের কারসাজি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ৩১ বছরের মধ্যে গতবার কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়ার দরে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় নেমে আসে। দাম না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভে চামড়া ফেলেও দেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছর কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু নানান চাপে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষিতে এবার কী করা যায় সে বিষয়ে অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে কাজ করতে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী ট্যারিফ কমিশন কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার পক্ষে মত দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওয়েট-বস্নম্ন লেদার রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. হুমায়ন বলেন, দেশে ওয়েট বস্নম্ন লেদার ৪০ ভাগ, ক্রাস্ট চামড়া ৪০ ভাগ এবং ২০ ভাগ ফিনিশড লেদার রপ্তানি চালু করতে পারলে আবারও চামড়ায় সুদিন ফিরবে। এদিকে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, রপ্তানির বিরোধিতা করে বলেছেন, সরকার যদি কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে দেশের ট্যানারিগুলো আগামীতে চামড়া সংকটে পড়বে। সরকারের তৈরি আধুনিক চামড়াশিল্প নগরী কাঁচামালের অভাবে অকেজো হয়ে যাবে। দেশের একটা সম্ভাবনাময় খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এই সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। সূত্র বলছে, কমিশন গত বছরের অভিজ্ঞতায় এবার এই সুপারিশ করেছে। গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশের চামড়ার একটি অংশ পচে যায়। এর বড় কারণ ছিল চামড়া কিনতে অনীহা। দেশের চামড়া প্রক্রিয়াকারী ট্যানারি মালিকরা গত বছর চামড়া কেনার জন্য বাজারে পর্যাপ্ত টাকা ছাড়েননি। এক্ষেত্রে তারা ব্যাংক ঋণ না পাওয়াকে দায়ী করেছিলেন। চাহিদা কম থাকায় দামও তলানিতে নেমে যায়। অনেকে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন। অনেক জায়গায় বাড়তি দামে লবণ কিনে সংরক্ষণ না করায় পচে যায়। এবারও পরিস্থিতির উন্নতির তেমন কোনো আশা নেই। জানা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে চামড়া খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরে ২০১৭ সালে চামড়াশিল্পকে 'প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার' ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১১৬ কোটি ৯ লাখ মার্কিন ডলার। পরের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর পরের বছর (২০১৭-১৮) এই খাত থেকে রফতানি আয় ১২ শতাংশ কমে যায়, আসে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ কমে রপ্তানি আয় দাঁড়ায় ১০১ কোটি ৯৮ লাখ ডলারে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ শতাংশ কম এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ কম। গত অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে