শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার অবনতি, উন্নতি পূর্বাঞ্চলে

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০
বন্যায় পস্নাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় চালে আশ্রয় নিয়েছে দুইশিশু। ছবিটি শুক্রবার ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার নন্দলালপুর এলাকার চর থেকে তোলা -স্টার মেইল

আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এসব তথ্য জানিয়েছে। তারা বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ আশপাশের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজানভূমি মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঢাকা জেলার আশপাশের নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়ে উলেস্নখযোগ্য বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীতে ৭৬, কক্সবাজারে ৬৫ ও বরগুনায় ৫২ মিলিমিটার। একই সময়ে বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের দার্জিলিংয়ে ৬৪ ও চেরাপুঞ্জিতে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আমাদের আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- বরিশাল : বরিশালের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল স্রোতের মুখে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার বরিশালের পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার, হিজলার ধর্মগঞ্জে নদীর ২ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখানে সুরমা-মেঘনা নদীর পানি ৪৯ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠির বিষখালি নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার, বেতাগীর বিষখালী নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার ও বামনার বিষখালী নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানিয়েছেন, উজানের পানির চাপের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের হিজলা, মুলাদীর বিভিন্ন নদীসহ বানারীপাড়া-উজিরপুরের সন্ধ্যা, মেহেন্দিগঞ্জের কালাবদর ও তেঁতুলিয়া এবং ঝালকাঠির রাজাপুরের বিষখালী নদী তীরবর্তী এলাকায় কিছুটা ভাঙন দেখা দিয়েছে। আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় পানি বন্দি হয়ে শত শত পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভাঙনের আতঙ্কে আছে অনেক পরিবার। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। গবাদি পশুর খাবারের সংকট। বন্যায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে কিছু কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নিতান্ত মনে করেন এলাকাবাসী। পাহাড়ি ঢলে উজানের পানি এবং গত কয়েকদিন ভারী বর্ষণের ফলে কালনী-কুশিয়ারা নদির পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আজমিরিগঞ্জ সদরের বাজারের লঞ্চ টার্মিনাল ঘাট, চর বাজারের সবজি বাজার, কাঠ বাজার এলাকায় সবকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে গেছে। এছাড়া পৌর এলাকার আজিম নগর লম্বা হাটির নতুন বাড়ি, মুন্সি হাঠির নতুন বাড়ি, শরীফ নগরের নতুন বাড়ির বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ও অতি বৃষ্টির কারণে কালনী-কুশিয়ারা নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে নিচু বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান জানান, দৌলতপুর ইউনিয়নের নলুয়া গ্রাম, আড়িয়ামুগুর নতুন পাড়া, দৌলতপুর হেঙ্গুর পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের ১ হাজার পরিবারের বসতবাড়ি বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী জানান, কাগাপাশা ইউনিয়নের আট শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বানিয়াচং সদর ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের কামালখানীর জাঙ্গাল ও চানপুরের বন্দের বাড়ি, পূর্বগড়ের নতুন হাটি, দত্তপাড়া-চতুরঙ্গ রায়ের পাড়ার বন্দের বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সাপাহার (নওগাঁ) : উজানে ভারতের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোর কয়েকটি গ্রামে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির ফলে উজানে ভারতের নদীগুলো থেকে প্রবল বেগে স্রোতের পানি ভাটির দিকে নেমে আসায় হঠাৎ করে সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, শিরন্টি ও গোয়ালা ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় বন্যার পানি উঠতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই ওইসব এলাকার অনেক ফসলের মাঠ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পানি উঠতে দেখা গেছে। উপজেলার পুনর্ভবা নদীর পানি উপচে উত্তর পাতাড়ী, জালসুখা, কাউয়াভাসা, কলমুডাঙ্গা, হাপানিয়াসহ বেশ কিছু এলাকার গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে ভবিষ্যতে ওই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে এলাকাবাসী জানান। নলডাঙ্গা (নাটোর) : উজানের ঢল ও টানা প্রবল বর্ষণে নাটোরের নলডাঙ্গা পয়েন্টে বারনই নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার ভোর ৬টায় উপজেলার নলডাঙ্গা হাট পয়েন্টে বারনই নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান। এতে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে নদী রক্ষার কয়েকটি এলাকার বাঁধে দেখা দিয়েছে ফাটল এবং নদী পাড়ের দুই শতাধিক বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ায় বাড়িঘর ছেড়ে এসব পরিবার আশ্রায় নিচ্ছে আত্মীয় ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী আশ্রায়কেন্দ্রগুলোতে। (অষ্টগ্রাম) কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের হাওড় উপজেলা অষ্টগ্রামে বন্যায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি। মিলছে না সরকারি কোনো ত্রাণ। বন্যার পানি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে উপজেলার খয়েলপুর আব্দুলস্নাপুর, আদমপুর কলমা, পূর্বঅষ্টগ্রাম এ ৪টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মারাত্মকভাবে দিনাতিপাত করছেন। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে এবং অনেকই ঘরে উঁচু মাচা বেঁধে মানবেতরভাবে বসবাস করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে