কেন্দ্রীয় কমিটির আনন্দ আয়োজন
সোনারগাঁওয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের চারুকারুশিল্প দর্শন
প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:২০

]প্রাক প্রস্তুতিসভা :শীত গিয়ে বসন্তের আগমন ঘটছে। বন্ধুদের মনে বসন্ত এসেছে এবং ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিও ঘোষণা হয়েছে। তাই প্রথম সভায় তারা সিদ্ধান্ত নেয়, ইট-পাথরের ব্যস্ত শহরের বাইরে একটু সময় করে ঘুরে আসা যায়। তাই ঘোরাঘুরি এবং বার্ষিক চড়ুইভাতির অংশ হিসেবে সোনারগাঁওয়ে গ্রামীণ পরিবেশ উপভোগ করতে যাওয়া হবে। সর্বসম্মতিক্রমে সাহিত্য সম্পাদক রাশিদা আক্তারকে সভাপতি করে পিকনিক উপকমিটি গঠন করা হয় এবং ১৫ ফেব্রম্নয়ারি শনিবার পিকনিকের দিন নির্ধারণ করা হয়। রেজিস্ট্রেশন : পিকনিকের খাবার মেনু ও চাঁদা নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই বন্ধুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রেজিস্ট্রেশন শুরু করেন। নানা ব্যস্ততার কারণে অনেক বন্ধুই পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তবে সপরিবারে পিকনিকে অংশগ্রহণ করেন কয়েকজন। যাত্রা হলো শুরু : পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই বন্ধুরা গুলিস্তানের স্টেডিয়াম গেটে জড়ো হতে থাকেন। সামান্য সমস্যার কারণে একটু দেরিতে আসেন পিকনিক উপকমিটির সভাপতি রাশিদা আক্তার। এরপর ঠিক দশটায় পিকনিকের গাড়ি যাত্রা শুরু করে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সোনারগাঁয়ের সোনা বিবি পিকনিক স্পটের উদ্দেশ্যে। সকাল ১১টার আগেই আমরা পৌঁছে যাই নির্ধারিত স্থানে। সোনা বিবি পিকনিক স্পট : সোনারগাঁওয়ের ঈশা খার স্ত্রী সোনা বিবির ৫০ বিঘা দীঘির উত্তর পাড়ে অবস্থিত সোনাবিবি পিকনিক স্পটে পৌঁছার পর প্রথমেই আমরা অর্থ সম্পাদক আফরিনার নাজিলাস কিচেনের পরিবেশনায় সকালের নাস্তা স্যান্ডউইচ, সিদ্ধ ডিম ও বরই পরিবেশিত হলো। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল মঞ্চ। নাস্তার পর শুরু হয় গল্প, কবিতা ও হাস্যরসের আড্ডা। রান্নাবান্না : একদিকে নাজিলাস কিচেনের কর্ণধার আমাদের বন্ধু আফরিনা আক্তার নিজ হাতে দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন সহযোগিতায় ছিলেন মুন্নী, নিপা, বাবু, সাথী ও হোসেন প্রমুখ। খাবারের মেনু ছিল সাদা ভাত, মাংসের ঝাল ফ্রাই, সবজি, ডাল, সালাদ। কবিতা ও হাস্যরস : কবিতা আবৃত্তি করে রীতিমতো মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন আমাদের বন্ধু দিদার, সাজ্জাদ, বাদল, হামিদ, সালাম ও সাখাওয়াত। উপস্থাপনায় ছিলেন বি.স. বাবু ভাই। প্রথমে কবিতা আবৃত্তি করে রীতিমতো মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন বন্ধু দিদার ভাইয়ের স্বরচিত প্রেমের কবিতা। শুরুটা এ রকম বসন্ত বিলাসী ছিল আমার হৃদয়/যৌবন বন্দী তোমার নেশা জড়ানো চোখে; অন্য কবিতার নাম 'গাঢ়ো কালো তিল'; সাজ্জাদ আবৃত্তি করেছেন ভবানী প্রসাদ মজুমদারের কবিতা 'বাংলাটা ঠিক আসে না'; বাদল ভাইয়ের স্বরচিত কবিতা : মা তুমি কেমন আছো ওপারে; এবং অর্জুন দাদার চুল নিয়ে একটি মজাদার কবিতা; হামিদ আবৃত্তি করেছেন মহাদেব সাহার বৃষ্টির জল কবিতা; সালাম ভাই স্বরচিত কবিতা 'নারী রূপ' ও সাখাওয়াত নিপাকে উদ্দেশ্য করে ছন্দে ছন্দে একটি ছড়াকবিতা শুনান। নিপার জন্মবার্ষিকী পালন : বন্ধু নিপা আহমেদ সারাহ্ জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য ঢাকা থেকে কেক নিয়ে যাওয়া হয়। এক এক করে সব বন্ধু মঞ্চে ওঠেন কেক কাটায় পাশে থেকে স্মৃতি হয়ে থাকার জন্য। কেক কাটা হলো এবং নিপাসহ সবাই এক অপরকে কেক খাইয়ে দিলেন। তবে নাম উলেস্নখ না করে বলতে হচ্ছে একজনের পুরো মুখমন্ডল কেক পালিশ করে রেখেছিল। কেক কেটে আনন্দ করে জন্মবার্ষিকী পালনে নিপা অভিভূত হয়ে পুলকিত মনে বন্ধুদের সুভাশীষ জানান। তাকে নিয়ে গান করায় অর্জুন দাকে তিনি বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানান এবং বাদল ভাই নিপাকে উদ্দেশ্য করে একটি কবিতা পড়ে শোনান। গানে গানে দুপুর এবং মধ্যাহ্ন ভোজ : গান পরিবেশনা শুরু হবে কিন্তু এমন সময় ঢাকা থেকে খবর এলো যাযযায়দিনের সিনিয়র ম্যানেজার নুরুল হক ভাই ও সার্কুলেশন ম্যানেজার বিলল্াল হোসাইন চড়ুইভাতির আনন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। তাদের উপস্থিতিতে গান গেয়ে সুরের ঝংকারে মাতিয়েছেন ইত্যাদি খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী অর্জুন বিশ্বাস, নন্দিত সঙ্গীতশিল্পী বিপুল শর্মা, ওবায়দুর রহমান বাদল, মরমী সঙ্গীতশিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এবং ছোট্ট বন্ধু শোভন শর্মা। ছোট্ট বন্ধু শোভন গাইলেন লালনের গান ধন্য ধন্য বলি তারে এবং মিলন হবে কতদিনে। বাদল ভাই গাইলেন তুমি আমার আমি তোমার এই আশা করে/তোমারে পুষিলাম কত আদরে; নারী হয় লজ্জাতে লাল/ফাল্গুনে লাল শিমুল বন। বিপুল শর্মার কণ্ঠে মান্না দের গাওয়া গান, বেহাগ যদি না হয় রাজি/বসন্ত যদি না আজ আসে; আমি যে জলসা ঘরে এরপর ওগো বর্ষা তুমি ঝর না গো অমন জোরে/বর্ষা তুমি ঝর না গো অমন জোরে/কাছে সে আসবে তবে কেমন করে? গানগুলো দর্শকশ্রোতা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। এরপর নিপার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শতায়ু কামনা করে অর্জুন বিশ্বাস গাইলেন, একশ বছর বেঁচে থাকো/একশ বছর বেঁচে থাকো/আমরা করি কামনা/হ্যাপি হ্যাপি বার্থডে টু নিপা। অর্জুন দাদার কণ্ঠের এই গানটি সত্যি অন্য রকম অনুভূতিতে ছুঁয়ে গেছে সবার মন। এছাড়া, তার লেখা ও সুর করা জীবনমুখী প্রেম ভালোবাসা জাগানিয়া গান গাইলেন, তুমি আসবে বলে নাক ডাকাডাকি কাকডাকা ভোরে উঠি; একটা দুষ্টু মেয়ে আমায় চোখ মেরেছে; ময়না আমি তোরে ভালোবাসি; তোরে ভেবেছিলাম সহজ সরল; মিসকল মারিস নারে বন্ধু মিসকল মারিস না; বেশ কয়েকটি গান শুনিয়ে মুগ্ধ করলেন বন্ধুদের সবাইকে। মরমী সঙ্গীতশিল্পী নিপা তার সুমধুর কণ্ঠে প্রথমেই যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের বন্ধুদের প্রতি ছন্দে ছন্দে কৃতজ্ঞতা, শুভাশীষ ও ধন্যবাদ জানান। তাকে নিয়ে গান করায় অর্জুন দাদাকেও বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, 'তবে এ গানটি লেখার পিছনে বাবু দাদা অর্জুন দাদাকে উৎসাহীত করেন যেটি আমি আজকে জানলাম।' এরপর নিপা তার গান পরিবেশন শুরু করেন : আমার মন মজাইয়ারে, দিল মজাইয়া মুর্শিদ নিজের দেশে যাও; আমার হাড় কালা করলাম রে, দেহ কালার লাইগা; আগুন লাগাইয়া দিল কনে হাসন রাজার মনে; চ্যাংঙেড়া বন্ধুয়া রে তোমাক দেখে বুক, ধুক ধুক ধুক ধুক করে; ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রবো আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে; ও মুই না শুনং তোর বৈদেশিঅর কথা রে; ভাব আছে যার গায় দেখলে তারে চেনা যায়; মানব জনম সফল হবে গুরুর উপদেশে। এরপর সমবেত কণ্ঠে : ধন্য ধন্য মেরা সিল সিলা এলো দিলিস্নতে নিজামুদ্দিন আউলিয়া। তবলায় সহযোগিতা করেন কেশব সরকার। নুরুল হক ভাই গান শুনে সঙ্গীত শিল্পীদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ও অর্থমূল্যে পুরস্কার দেন এবং ভবিষ্যতে যায়যায়দিন পত্রিকার যে কোনো অনুষ্ঠানে ফ্রেন্ডস ফোরামের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা দেন।