কুড়িগ্রামে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার লেখক পাঠক শুভানুধ্যায়ীদের সংগঠন ফ্রেন্ডস ফোরামের উদ্যোগে গত ১৪ নভেম্বর কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে ও বাল্যবিবাহ রোধের ওপর এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অত্র মাদ্রাসার শিক্ষক এবং দাখিল স্তরের ৮ম ও ৯ম শ্রেণির প্রায় ৮০ জন ছাত্রী অংশগ্রহণ করে।
যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম, কুড়িগ্রাম ইউনিটের সভাপতি ও শিক্ষাবিদ প্রতিমা চৌধুরীর সভাপতিত্বে উক্ত মতবিনিময় ও আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াহেদ, যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের সহ-সভাপতি আব্দুল আখের, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার রাশেদুল আনাম অপু, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ গোলাম হক্কানী রাব্বি এবং অত্র মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষিক লিপিকা মন্ডল। এ মতবিনিময় সভায় কুড়িগ্রামের ফ্রেন্ডস ফোরামের বন্ধু সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা বাল্যবিবাহের বিভিন্ন কুফল সম্পর্কে ছাত্রীদের অবহিত করেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অনেক পরিবার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। এসব শ্রেণির মানুষ বাল্যবিবাহকে মেয়েদের সতীত্ব রক্ষার উপায় হিসেবে দেখে থাকেন এবং তাদের স্বাধীনতা ও চলাফেরা সীমিত করা হয়। শিক্ষার অভাব এবং বাল্যবিবাহের নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়। আর্থিক অভাবের কারণে অনেক পিতা-মাতা কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন। তারা বোঝা কমানো এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নত করার উপায় হিসেবে দেখে থাকেন বাল্যবিবাহকে। গরিব মানুষ কন্যাসন্তানকে বোঝা হিসেবে দেখে থাকেন। গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবার তাদের মেয়েদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামগ্রিক সুস্থতার ওপর বাল্যবিয়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে অবগত নয়। বাল্যবিবাহ বাংলাদেশের মেয়েদের এবং তাদের পরিবারের জীবনে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া মেয়েদের মৃতু্যঝুঁকি বেশি থাকে, সেইসঙ্গে গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সঙ্গে সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি থাকে। তারা তাদের স্বামীর কাছ থেকে শারীরিক ও যৌন সহিংসতারও শিকার হন। যেসব মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়, তাদের প্রায় সবাইকেই স্কুল ছেড়ে দিতে হয়, যা তাদের শিক্ষা এবং ব্যক্তিগতভাবে সামাজিক বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এটি দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের চক্রকে স্থায়ী করতে অনেক বেশি সহায়তা করে। যেসব মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়, তাদের প্রায়ই সীমিত সামাজিক সমর্থন থাকে এবং তারা তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। কাজেই বাল্যবিবাহ যাতে না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। ফ্রেন্ডস ফোরামের বন্ধুরা আরও বেশি বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করবে বলে আলোচনা সভা মূলতবি করেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীরা নিজেরা 'বাল্যবিবাহকে না বলি' সেস্নাগানের ওপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এবং প্রতিবেশীদের বল্যবিবাহ রোধে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে।
উপদেষ্টা
ফ্রেন্ডস ফোরাম কুড়িগ্রাম