মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল ও মধুপুর প্রতিনিধি
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় হেফাজতে ইসলামের আপত্তির মুখে স্থগিত হয়ে যাওয়া লালন স্মরণোৎসব অবশেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার রাতে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে লালন স্মরণোৎসব। ফকির লালন সাইজির ১৩৪তম তিরোধান বর্ষ উপলক্ষে 'মধুপুর লালন সংঘ' মধুপুর রাণী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

মধুপুর লালন সংঘের আহ্বায়ক সবুজ মিয়া জানান, 'মরমী কবি লালন সাইজির ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে মধুপুর লালন সংঘ প্রতি বছরের মত লালন স্মরণোৎসব-২০২৫' আয়োজন করে। বরাবরের মতো এবারও বাউল, ভক্ত-শিষ্যসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমনে মহামিলনের উৎসবে পরিণত হয়। উৎসব উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মধুপুর লালন সংঘের সভাপতি ফরহাদ হোসেন তরফদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মধুপুর ইউএনও মো. জুবায়ের হোসেন, মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির, লালন স্মরণোৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সবুজ মিয়া, মধুপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোতালেব হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক ও জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফাতেমা রহমান বিথী। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সংঘের উপদেষ্টা এসএম শহীদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে মধুপুর লালন সংঘের উপদেষ্টা প্রয়াত সাংবাদিক এমএ রউফের মৃতু্যতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আয়োজকরা জানান, মধুপুর লালন সংঘের উপদেষ্টা অলোক কুমার চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্মরণোৎবে সংগীত পরিবেশন করেন, কুষ্টিয়া থেকে আসা লালন শিল্পী শাহাবুল, বাউল রশীদ, গামছা নার্গিস, মুন মোনালিসা, কাজল রেখা এবং মধুপুর লালন সংঘের নিয়মিত শিল্পীরা।

এর আগে গত ১২ ফেব্রম্নয়ারি স্থগিত হওয়া মধুপুর লালন স্মরণোৎসব ২৩ ফেব্রম্নয়ারি জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অডিটরিয়ামে সীমিত আসন সংখ্যার কারণে সেখানে উৎসব আয়োজন সম্ভব ছিল না। সেজন্য গত ১৮ ফেব্রম্নয়ারি টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের কাছে বাসস্ট্যান্ডে (স্থগিত হওয়ার আগে নির্ধারিত) অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রম্নয়ারি মধুপুর ইউএনও স্থানীয় রাণী ভবানী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উৎসব আয়োজনের পরামর্শ দেন এবং মধুপুর লালন সংঘ থেকে তা গ্রহণ করা হয়।

মরমী কবি লালন সাইজির ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে মধুপুর লালন সংঘ গত ১২ ফেব্রম্নয়ারি লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের বাধায় অনুষ্ঠান স্থগিত হয়। ওই সময় হেফাজতে ইসলামের মধুপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুলস্নাহ বলেছিলেন, 'ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় আমরা ভ্রান্ত লালন মতাদর্শ প্রচারে আপত্তি জানিয়েছি।'

অনুষ্ঠান স্থগিত করার পর বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হলে উপজেলা প্রশাসন এবং মধুপুর বিএডিসি ক্যাম্পে স্থাপিত সেনা ক্যাম্প থেকে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সমোঝোতার মাধ্যমে অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মধুপুর হেফাজতে ইসলাম প্রতিশ্রম্নতি দেয়- অনুষ্ঠান আয়োজনে তারা কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না।

সোমবার টাঙ্গাইলের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ছাত্র ফেডারেশনের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ফাতেমা রহমান বিথী জানান, হেফাজতে ইসলামের বাধার মুখে মধুপুর লালন স্মরোণৎসব বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্মরোণৎসব রোববার রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুলাই অভু্যত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ হবে সকল ধর্মের সকল বিশ্বাসের মানুষের। রাষ্ট্র সবার ধর্ম, সংস্কৃতি পালনের অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে- এটাই ছিল জুলাই অভু্যত্থানের আকাঙ্খা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে