মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

রংপুরে আধুনিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পস্নাণ্ট স্থাপনে স্থানীয়দের বাঁধায় অনিশ্চিয়তা

আবেদুল হাফিজ, রংপুর
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রংপুরে আধুনিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পস্নাণ্ট স্থাপনে স্থানীয়দের বাঁধায় অনিশ্চিয়তা
রংপুরে আধুনিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পস্নাণ্ট স্থাপনে স্থানীয়দের বাঁধায় অনিশ্চিয়তা

রংপুরে সরকারি পর্যায়ে আধুনিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পস্নান্ট স্থাপনে স্থানীয়দের বাঁধায় অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। মামলার ভয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিও হাত গুটিয়ে বসে আছে। এই প্রকল্পটি রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের দক্ষিণ ফটক সংলগ্ন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমআই) ভবন লাগোয়া স্থানে ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে। রমেক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, একযোগে দেশের ১৫টি মেডিকেল হাসপাতাল ভিত্তিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থপনা প্রকল্প স্থাপন হচ্ছে। এর মধ্যে রংপুরও রয়েছে। এই কাজটি পেয়েছেন ঝিনাইদহ গুণগুণ ইন্টারপ্রাইজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দরপত্র আহবান করে। পস্নান্টটি স্থাপনে স্থান নির্ধারণ করা হয় রমেক হাসপাতালের দক্ষিণ ফটক সংলগ্ন বিএমআই ভবন লাগোয়া স্থানে। ওই স্থানে কাজও শুরু হয়। এতে বাধ সাধে স্থানীয়রা।

প্রিজম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (নর্থ জোন) ইস্তাক মাহফুজ জানান, রংপুর জেলার সরকারি মেডিকেল ১টি, বেসরকারি মেডিকেল ২টি, ৭ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, বেসরকারি ডায়াগনিস্টি সেন্টার ৩২২টি, ক্লিনিট ১৪০টি, ৩১০টি কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিদিন মেডিকেল বর্জ্য প্রায় ২ মেট্রিক টন জমা হয়ে থাকে। এসব বর্জ্য আর্থিক চুক্তিতে নেওয়া হচ্ছে।

বর্জ্য অপসারণে প্রিজম কাজ করলেও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশ পাশে মেডিকেল বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অন্য বেসরকারি মেডিকেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী লিটন জানান, নির্মাণাধীন পস্নান্টের আশপাশে অসংখ্য সাধারণ মানুষের বসবাস। আছে অসংখ্য বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানক্লিনিক, হাসপাতাল কনসালটেন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এতে করে সেখানে পরিবেশ দুষন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে পারে। ওই স্থান বাদ ঝুঁকিমুক্ত অন্য স্থানে মেডিকেল বর্জ্য পস্নান্ট স্থাপনের দাবি জানান। তিনি কারাগারের একটি স্থানে লাশকাটা ঘরের পাশে একটি স্কুলের জায়গায় পস্নান্ট স্থাপনের দাবি করেন। ব্যবসাীয় বিল্পব নামে এক ব্যক্তি পস্নান্ট স্থাপনে বিরোধীতা করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া র্নিধারিত স্থানে পস্নান্ট স্থাপন করা যাবে না। এরপরও যদি ওই স্থানে পস্নান্ট স্থাপন করা হয় তাহলে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে আরেক বিরোধীতাকারী ডা. মো. জিকরুল হক বিষয়টি জানেন না বলেও জানান। স্থানীয় হিসাবে তাকে জড়ানো হয়েছে।

এদিকে, নির্ধারিত স্থানটিতে পস্নান্ট স্থগিতাদেশ চেয়ে স্থানীয়রা হাসপাতালের পরিচালক বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। নির্ধারিত স্থানে পস্নান্ট স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধনও করেন তারা।

উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আশরাফুল আলম লিটন মহানগর কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় কয়েকজন ছেলে নির্মাণ কাজের মালামাল সরবরাহের দাবি করেছিল। তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় পস্নান্ট স্থাপনের প্রতিবাদে তারা মানববন্ধন করে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকার বদিউজ্জামান বাদশা জানান, মামলার ভয়ে তিনি কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সমস্যার সমাধান না হলে তিনি কাজ করবেন না।

স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল গুড হেলথের নির্বাহী পরিচালক ডা. সৈয়দ মামুনুর রহমান জানান, পস্নাট স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করার আগে বেসরকারি ডায়াগনিস্ট-ক্লিনিক ও স্থানীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হলে এমন উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তিনি সবার সঙ্গে বসে সমস্যা সমাধানের দাবি জানান।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. আশিকুর রহমান জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আপতত পস্নান্ট স্থাপনের কাজ স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পস্নাট স্থাপনে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। ঝুঁকিমুক্ত এলাকায় পস্নান্ট স্থাপ৪ন করা হলে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

রংপুর জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বিষয়টি জানেন বলে জানান। তিনি বলেন, পস্নান্ট স্থাপনে নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। তিনি পরিত্যক্ত হেলিপ্যাডের জায়গাটি পরিদর্শনের কথাও জানান।

মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পস্নান্টের প্রকল্প পরিচালক ডা, এবিএম বদিউজ্জামান জানান, এবিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টাকে অবগত করা হয়েছে। পস্নান্ট স্থাপনের বিষয়টি তাদের সিন্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে