রাজারহাটের প্রত্যন্ত পলস্নীর পুকুরে মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)
কুড়িগ্রামের রাজারহাটের প্রত্যন্ত পলস্নীতে পুকুরে বাংলা বা দেশীয় মিশ্রিত মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। এতে করে মাছ চাষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে কুড়িগ্রামে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে এই পিছিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার এলাকায় পলস্নব চন্দ্র রায়ের ৪০শতক একটি পুকুরে জেলেরা জাল টানছেন। পুকুর পাড়ে জালে ধরা মাছ আনতেই স্থানীয়রা অবাক বড় বড় সাইজের গলদা চিংড়ি মাছ দেখে! কিছুটা আশ্চর্য হবার মতোই মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ! জেলায় প্রথম বারের মতো কার্প, পাঙ্গাস,সিলভার কাপসহ দেশীয় জাতের মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষ। কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এ জাতীয় মাছ চাষে অধিক লাভও পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ৭মাস আগে পিএল সাইজের ৬শ' গলদা চিংড়ি ছাড়া হয় পুকুরে। জেলার মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা দেখে খুশি স্থানীয়রাও। এই মাছ খেতেও সুস্বাদু। অন্যান্য মাছের সঙ্গে চিংড়ি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এতদিন পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ হতো। বেসরকারি সংস্থা পলস্নী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় প্রথমবারের মতো দেশীয় কার্প জাতীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মৎস্য চাষিরা। এক খাবারেই পুকুরের সব মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন অন্যরাও। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। রপ্তানিযোগ্য গলদা চিংড়ি চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে মৎস্যচাষিরা লাভবান হবেন এবং কুড়িগ্রাম জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা। মৎস্যচাষি পলস্নব চন্দ্র রায় বলেন, প্রতি কেজিতে ৮-১০টি করে গলদা চিংড়ি উঠছে। বর্তমান ১২শ' টাকা কেজি বাজার দরে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করবেন তিনি। এই মাছ চাষে মাছের খাবারসহ পুকুর প্রস্তুতকরণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫-৩০হাজার টাকা। সময় মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যা করায় মাছের ওজনও ভালো হয়েছে। এক খরচে বাড়তি দেশীয় মাছ বিক্রি করে আরও লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে জানান চাষিরা। মাধবী রাণী বলেন, বাজারে গলদা চিংড়ি মাছের দাম বেশি। গরিব মানুষের সার্মথ্যের বাইরে এই মাছ। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে করে এই মাছ খাওয়া আর স্বপ্ন দেখার মতো। এখন নিজের পুকুরে দেশীয় মাছের সঙ্গে বাড়তি খরচ না করেই গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। সাইজেও বড় খেতেও সুস্বাদু। স্থানীয় মৎস্যচাষী বলেন, 'বাংলা বা দেশীয় মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষ হয় এটা আমাদের জানা ছিল না। কিন্তু পলস্নব রায়ের পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ দেখে অবাক হয়েছি। সামনে আমার নিজের পুকুরেও এই মাছ চাষ করব।' স্বপ্না রাণী বলেন, 'সরকারি-বেসরকারি ভাবে সহযোগতিা পেলে আমাদের গ্রামে আরও অনেক পুকুর আছে সেখানে গলদা চিংড়ি চাষ করা সম্ভব।' আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, 'কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলার ১০জন চাষির প্রায় চার একর পুকুরে ছয় হাজার পিস গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষের জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ এই জেলায়। তাই গলদা চাষ অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। আগামীতে আমরা গলদা চিংড়ি চাষে প্রসারের পরিকল্পনা করছি।' আরডিআরএস বাংলাদেশের কৃষি ইউনিট টিম লিডার বিদু্যৎ কুমার সাহা বলেন, উত্তরবঙ্গে মৎস্য চাষীদের মধ্যে গলদা চিংড়ি চাষে আগ্রহ কম। ফলে সুস্বাদু এই মাছ চাষে কুড়িগ্রামে চাষ হচ্ছে। এর প্রসার বৃদ্ধি করা গেলে আগামীতে উচ্চ মূল্যের এই মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্যত্র রপ্তানি করা সম্ভব। এতে করে জেলার অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা রাখবে। রাজারহাট উপজেলা মৎস্য অফিসার এমদাদুল হক বলেন, সরকারি-বেসরকারি ভাবে গলদা চিংড়ি চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জেলায় ২৬হাজারের অধিক পুকুরে সাড়ে ২০হাজার চাষি মাছ উৎপাদন করছে।