শ্যামনগরে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

মাধবপুরে ধর্মঘর ডিগ্রী কলেজে ৩২ বছরেও নির্মিত হয়নি

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এদিকে, হবিগঞ্জের মাধবপুরে ধর্মঘর ডিগ্রী কলেজে শহীদ মিনার ৩২ বছরেও নির্মিত হয়নি। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত- শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমস্যায় পড়তে হয়। এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিকল্প শহীদ মিনার নির্মাণ করে নিতে হয়। প্রতি বছর ২১ ফেব্রম্নয়ারী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানায় অসংখ্যা মানুষ। বিশেষ করে এই দিন আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অনেক কর্মসূচি গ্রহণ ও পালন করতে হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলায় স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯১টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার নাই ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। স্কুল পর্যায়ে শহীদ মিনার নাই ২২টি, মাদ্রাসা পর্যায়ে নাই ২৮টি ও কলেজ পর্যায়ে নাই ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শহীদ মিনার নাই এমন একটি প্রতিষ্ঠান ধূমঘাট নিম্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন মহান ২১ ফেব্রম্নয়ারী পালিত হয় বিকল্প শহীদ মিনার নির্মাণ করে। অর্থের অভাবে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার এখনও পর্যন্ত নির্মাণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। উপজেলা সদরের মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ভাষা শহীদদের স্মরণে উপজেলায় প্রথম ১৯৬৯ সালে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় বর্তমান শ্যামনগর পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয় চত্তরে। যা পূর্বে শ্যামনগর ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। মাখন চ্যাটার্জীর সহায়তায় ও বাইরের একজন ঠিকাদারের অর্থ সহায়তায় ইউপি চত্তরে মাস্টার নজরুল ইসলাম, লিয়াকত সরদার, অচিন্ত্যদে, মির আজিজসহ অন্যান্যরা শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা খুব প্রয়োজন। শ্যামনগর ইউএনও রণী খাতুন এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার থাকাটা খুবই প্রয়োজন। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নাই সেকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন। তবে তিনি স্থানীয়ভাবে ফান্ড সংগ্রহ বা স্কুলের ফান্ডে শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি আহব্বান জানান। মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নে অবস্থিত ধর্মঘর ডিগী কলেজে ৩২ বছরেও নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। ডিগ্রী কলেজের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানে শহীদ মিনার না থাকাটা লজ্জাজনক-এ কথা স্বীকার করে কলেজটির অধ্যক্ষ আলী আসগর দাবি করেছেন আর্থিক সংকটের কারনেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জানা যায়, ধর্মঘর ডিগ্রী কলেজটি কালিকাপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালে কলেজটির উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত হয়। ২০১৩ সালে কলেজে মানবিক বিভাগ দিয়ে ডিগ্রী ক্লাশ চালু করা হয়। ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ডিগ্রী পর্যায়ে কমপক্ষে দুইটি বিভাগ চালুর কঠিন শর্ত দেওয়ার কারনে এবং প্রয়োজনীয় বিভাগ চালু করতে না পারায় ধর্মঘর ডিগ্রী কলেজের স্নাতক পর্যায় অধ্যাবধি এমপিওভুক্ত হয়নি। অধ্যক্ষ আলী আসগর জানান, বর্তমানে মানবিক,বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগে ৮শ' ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। প্রতিবছর কলেজটি থেকে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। ফলাফলও আশাব্যঞ্জক। কিন্তু কলেজটিতে একটি শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের জুন মাসে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার(পিআইও) কার্যালয় থেকে শহীদ মিনার নির্মানের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। কিন্তু জুন ফাইনালের কারনে টাকা তোলা কিংবা নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া হয়ে ওঠেনি। এখন প্রাপ্ত বরাদ্দের সঙ্গে কলেজ তহবিল থেকে কিছু টাকা দিয়ে একটি শহীদ মিনার নির্মান কাজ কিভাবে সুন্দরভাবে করা যায় সেই লক্ষ্যে কলেজের বিদু্যৎসাহী সদস্য মাধবপুর উপজেলা বিএনপ্থির সভাপতি সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম কামালকে আহবায়ক করে একটি কমিটি করা হয়েছে। ধর্মঘর আমবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা হবিগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুজ জাহের বলেন, সিলেট বিভাগের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে শিক্ষাদীক্ষায় ধর্মঘর অনেকদিন ধরেই শীর্ষস্থানে রয়েছে। অথচ এমন একটি এলাকার একটি ডিগ্রী কলেজে ৩০ বছরেও শহীদ মিনার নির্মাণ করতে না পারাটাকে খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও মাধবপুরের ইউএনও জাহিদ বিন কাশেম জানান, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।