আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা

বিদেশের বাজার দখল করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাছের আঁশ

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

মো. বাহারুল ইসলাম মোলস্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাছ কেটে তার আঁশ (আইস) রপ্তানি করা হয় বিদেশে। তা থেকে প্রতি মাসে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। জেলে পরিবারের আঁশ বিক্রেতারা প্রতিদিন মাছের আঁশ সংগ্রহ করে তা রোদে শুকিয়ে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। ঢাকার ব্যবসায়ীরা এসব আঁশ প্রক্রিয়াজাত করে চীন, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছেন। মাছের পরিত্যাক্ত আঁশ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন অনেক জেলে পরিবার। মাছের আঁশ বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আনন্দবাজার, মেড্ডা বাজার, ফারুকী বাজার, বউ বাজার, পশ্চিম মেড্ডা পীরবাড়ি বাজার, কাউতলী বাজার, মদ্যপাড়া বর্ডার বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে মাঝারি থেকে বড় আকারের কার্প জাতীয় মাছ, রুই, কাতল, মৃগেল মাছ নিয়মিত বিক্রি করা হয়। বেশীরভাগ ক্রেতাই বাজার থেকে মাছ কিনে মাছ গুলো বাজারেই মাছ কাটুয়াদেও কাছ থেকে কেটে পিস করে বাড়িতে নিয়ে যান। অনেকেই মাছগুলো কাটার সময় নাড়ি-ভুঁড়িসহ মাছের পরিত্যাক্ত অনেক অংশ গুলো ফেলে দেয়। মাছকাটুয়ারা মাছ কাটার আগে মাছের আঁশ গুলো আলাদা করে রাখেন। পরে এই কাঁচা আঁশগুলো বাড়িতে নিয়ে রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে রাখেন। পরে স্থানীয় পাইকার বা ব্যাপারীদেও কাছে প্রতি বস্তা আঁশ ২ হাজার ৮শ' থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন। কেজি হিসেবে ৮০ টাকা থেকে একশ' টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। প্রতিদিন শহরের তিতাস নদীর তীরের পূর্ব পাইকপাড়া, কান্দিপাড়া মাইমল হাটি, তিতাসের পূর্বপাড় সীতানগর, কাশিনগর গ্রামে মাছের আঁশ শুকানোর চিত্র দেখা যায়। শহরের মেড্ডা বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত রামু দাস জানান, মেড্ডা বাজারে দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাছ কাটেন। প্রতিদিন বিপুল পরিমান মাছ কাটেন তিনি। এসব মাছ থেকে বিপুল পরিমান আঁশ বের হয়। এই আঁশগুলোর মধ্যে বড় কার্প মাছ অন্যতম। পরে মাছের আঁশগুলো সংগ্রহ করে শুকিয়ে বিক্রি করেন। রামু দাস আরও জানান, রুই, কাতল, মৃগেল, ঘাসকার্প, কমন কার্প জাতীয় মাছের আঁশগুলো সংগ্রহ করা হয়। পরে পানিতে ধুইয়ে মাছের আঁশ থেকে রক্ত এবং চর্বি পরিষ্কার করা হয়। পরে কয়েক ধাপে সেগুলোকে রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকানোর পর বস্তায় তুলে রাখা হয় এবং পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। একই বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত দিলীপ দাস বলেন, 'মাছ কাটি প্রতিদিন। মাছ থেকে অনেক আঁশ বের হয়। মাছ কাটা শেষে দুপুরে বাড়িতে নিয়ে যাই। পরে ভালো করে ধুয়ে চাটাইয়ের মধ্যে শুকিয়ে বিক্রির উপযোগী করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকি।' আঁশ শুকানোর কাজে জড়িত পূর্নিমা দাস নামে এক গৃহবধূ জানান, মাছের আঁশ শুকিয়ে তিনি মাসে ৮ হাজার থেকে ১০হাজার টাকা আয় করেন। আনন্দ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া জানান, এসব মাছের আঁশ চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। মাছের আঁশ থেকে ওষুধ, ফুড সাপিস্নমেন্ট ও কসমেটিকস শিল্পে ব্যবহার হয়। এছাড়া ব্যাটারি তৈরি, বৈদু্যতিক পণ্য, কৃত্রিম কর্নিয়া ও পোলট্রির খাদ্য, ক্যাপসুল তৈরিতে ও ব্যবহার করা হয়। তিনি আরও বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গড়ে অন্তত ৫০টি পরিবার মাছের আঁশ শুকানোর সঙ্গে জড়িত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাছ ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে জেলা শহর থেকে প্রতি মাসে অন্তত ৫ লাখ টাকার মাছের আঁশ বিক্রি হয়।