১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে উত্তাল দেশ। সেই আন্দোলনে ২১ ফেব্রম্নয়ারি মায়ের মুখের ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম শহীদ জব্বার। গফরগাঁওয়ের গর্ব আব্দুল জব্বার উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামের সন্তান। তার জন্য গফরগাঁওবাসী গর্বিত।
মহান ভাষা আন্দোলনের এ শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৬২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয় ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।
সারাবছরে সাকুল্যে কয়েকজন দর্শনার্থী মিললেও খাতা-কলমে একজন পাঠকেরও হদিস মেলেনি ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে। পাওয়া যায়নি পাঠক রেজিস্টার খাতাও। ২০০৮ সালে সরকার এটি প্রতিষ্ঠা করলেও জমিয়ে তোলা যায়নি ১৭ বছরেও। জেলা পরিষদ থেকে একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারাও কাটান অলস সময়।
বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে রয়েছে ৪১৮৫টি বই। এরমধ্যে রয়েছে বেশ দূর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য বই। পরিতাপের বিষয় উপজেলা সদর থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় অনেকেই যেতে চান না এই গ্রন্থাগারে।
শহীদ আব্দুল জব্বারের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, ফেব্রম্নয়ারি মাস ছাড়া কদর পায় না ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। এটি সরব করে তোলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাবসহ নানা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তারা।
শহীদ জব্বার স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটির অবস্থান গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের পাঁচুয়া তথা জব্বার নগর গ্রামের ভাষা শহীদ জব্বার পৈত্রিক ভিটা সংলগ্ন স্থানে। ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত গ্রন্থাগারটি (লাইব্রেরি) উপজেলার শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর বাংলা ভাষার চেতনা-ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের নিজ গ্রামে নির্মিত হয় এ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।
স্থাপন করা হয় গফরগাঁও উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। জাদুঘরের ভেতরে স্থাপিত গ্রন্থাগারটিতে চার হাজারেও অধিক বই রয়েছে। ভেতরে রয়েছে ভালো মানের চেয়ার-টেবিল। আগে নিয়মিত পত্রিকা রাখা হলেও পাঠক না থাকার অজুহাতে ২০১৩ সাল থেকে পত্রিকাও রাখা হয় না।
গ্রন্থাগারটি দেখাশুনার ও পরিচালনা করার জন্য লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও পিয়নসহ মোট ৫টি পদ সৃষ্টি করা হয়, কিন্তু বর্তমানে এখানে কর্মরত আছেন একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার।
উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মুশফিকুর রহমান বলেন, ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর করা হলেও পাঠক ও দর্শনার্থী টানার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পাঠক ও দর্শনার্থী বাড়াতে প্রযোজনীয় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমির সালমান রনি বলেন, ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে জনসম্পৃক্তা বাড়ানোর জন্য প্রযোজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।