চারিদিকে মাদক কারবারীদের ছড়াছড়ি, ময়লার ভাগার, দুর্গন্ধের ড্রেন, বাসটার্মিনালের প্যা-পু, হঠাৎ রেলের প্রাচীর নির্মাণ ও যুগের পর যুগ মেরামতহীন রাস্তার পাশেই ৯০ বছরের পুড়োনো জুবিলী ইনস্টিটিউট। বগুড়ার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও এই প্রতিষ্ঠানে দিন দিন কমছে। অন্যদিকে নানা ধরনের সমস্যা বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, অভিভাবকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। একটি সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশায় এগিয়ে আসেনি কেউ। বর্তমানে যে পরিমান শিক্ষার্থী রয়েছে তারাও অন্যত্র ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
১৯৩৮ সালে স্থাপিত হয় বগুড়া জুবিলী ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকেই ব্যাপক সারা ফেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কারন শিক্ষার মানের দিক থেকে বিদ্যালয়টি বেশ এগিয়ে ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও ছিল বেশ উন্নত। কারন পাশেই রয়েছে রেল স্টেশন। এছাড়া বিদ্যালয়টির অদুরেই উত্তরবঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপিঠ সরকারি আজিজুল হক কলেজ। এসব নানা কারনে শিক্ষার্থীদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ছিল এটি। কিন্ত পরবর্তী সময়ে নানা প্রতিকুলতার কারনে দিন দিন অবহেলিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে বর্তমানে বগুড়ার সবথেকে দুরাবস্থায় রয়েছে বিদ্যালয়টি। এখানে এক প্রাচিরের মধ্যে জুবিলী ইনস্টিটিউট ছাড়াও রয়েছে চকসুত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি স্থাপিত হয় ১৯৬৫ সালে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান এতোটাই ভোগান্তিতে রয়েছে যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ হয় তাদের। ২০০০ সালের দিকে বগুড়া শহরের মধ্যে অবস্থিত বাস টার্মিনালটি অপসারন করে জুবিলী ইনষ্টিটিউটের পশ্চিমপাশে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকেই মূলত সমস্যার সৃষ্টি। বাস চলাচলের কারনে রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয় গর্ত। জমতে থাকে পানি, রিকশাসহ ছোট যানবাহনগুলোর চলাচল কমতে থাকে। বাড়তে থাকে মাদসসেবী ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রয় ও সেবন শুরু হয় এখানে। এতে কমতে থাকে ভদ্র মানুষদের চলাচল। বিব্রত অবস্থায় পড়ে শিক্ষার্থীরা। একারনে অভিভাবকরা সন্তানদের নিরাপত্তার সার্থে অন্যান্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে শুরু।
এছাড়া গত কয়েক বছর আগে রেল স্টেশনের দুপাশে প্রাচীর নির্মাণ হয়। এতে রেলের দক্ষিনপাশের শিক্ষার্থীদের সহজ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের পাশেই ময়লার ভাগার তৈরি হওয়ায় অসহ্য দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় ইমামুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, 'আমরা এই এলাকার মানুষ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতোটাই অবহেলিত যে, কখনোই এই প্রতিষ্ঠান ও এলাকার উপর নজর দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।' বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া বলে, 'অসহ্য দুর্গন্ধ, যাতায়াতের ভোগান্তি ও চরম ভয় নিয়ে আমরা বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি। এসবের সমাধান না হলে আমরাও অন্য স্কুলে চলে যাব।'
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দিপু রানী বলেন। 'আমরা যে, জুবিলী ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এই পরিচয় দিলে মানুষ নাক ছিটকায়। আমরা এক পোষাকে দুইদিন স্কুল করতে পাড়ি না, বর্ষার মধ্যে হাঁটুপানিতে অনেক কষ্টে প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে হয়।'
একই প্রাচিরের মধ্যে অবস্থিত চকসুত্রপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিউল আলম বলেন, 'বৃষ্টির মধ্যে প্রায়ই এই ময়লা পানির মধ্যে বাচ্চারা হাবুডুবু খায়। আমরা শিক্ষকরাও বহুবার পড়েছি।' বগুড়া পৌর প্রশাসক ও ডিডিএলজি মাসুম আলী বেগ বলেন, 'আপনার মাধ্যমে যেহেতু জানতে পারলাম, আজকেই প্রকৌশলীকে ওখানে পাঠাবো এবং অতি দ্রম্নত সমস্যার সমাধান করব।'