বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

ছন্দে ফিরেছে লারমা স্কয়ার বাজার, সংঘাত ভুলে সহাবস্থানের আশা

দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ছন্দে ফিরেছে লারমা স্কয়ার বাজার, সংঘাত ভুলে সহাবস্থানের আশা

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মিছিলকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনায় রুপ নেয় পাহাড়ী-বাঙালী দুইপক্ষ। একপর্যায়ে একদল দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় জেলার দীঘিনালা উপজেলার বাসটার্মিনাল সংলগ্ন লারমা স্কয়ার বাজার। এ ঘটনায় উভয় সম্প্রদায়ের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাই হয়ে যায়। ঘটনার পর মূহুর্তের মধ্যেই রাঙামাটি, বান্দরবানসহ পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ী-বাঙালী উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যা ভাংচুর, অগ্নিকান্ড সহ বিভিন্ন সংঘাতে রুপ নেয়। যদিও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে নন্দিত সম্প্রীতির পাহাড়ে এমনটা কখনোই কাম্য ছিল না। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, প্রশাসন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, জনপ্রতিনিধিসহ অনান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় সব সম্প্রদায়ের নের্তৃবৃন্দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি সহাবস্থানে ফিরেছে।

দুর্বৃত্তের আগুণে দীঘিনালার লারমা স্কয়ার বাজারে উভয় সম্প্রদায়ের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ যেন নিমিষেই শেষ হয়ে যায় লারমা স্কয়ার বাজারবাসীর স্বপ্ন। লারমা স্কয়ারের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। লারমা স্কয়ার বাজারে উভয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। আরও ছিল স্থায়ী-অস্থায়ী কাঁচা মাল, শাকসবজি ও মাছ-মাংসের দোকান। সেদিন দুর্বৃত্তের দেয়া আগুণে নিমিষেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, পুড়ে বিনাশ হয়েছে উভয় সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের তাজা স্বপ্ন।

ঠিক এর কয়েক মাস আগেও বিদু্যতিক শর্ট সার্কিটের আগুনে পুড়ে যায় পুরো লারমা স্কয়ার বাজার। তখনও সর্বস্ব হারায় লারমা স্কয়ার বাজারের পাহাড়ী-বাঙ্গালী ব্যবসায়ীরা। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে আবারও নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে নিরুপায় হয়েছিলো শতাধিক পরিবার। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন রকমের সহযোগিতা প্রদান করা হলেও তা দিয়ে সাধিত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। পরপর দুইবার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া লারমা স্কয়ার বাজারেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে অবিরাম চেষ্টায় উভয় সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা। বিগত সময়ের সহিংসতা ও সংঘাত ভুলে পাহাড়ী-বাঙ্গালীসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে সম্প্রীতির বন্ধনই এখন আশা।

পুড়ে যাওয়া জায়গায়তেই নতুন স্বপ্ন নিয়ে সামর্থ অনুযায়ী ব্যবসা শুরু করেছেন লারমা স্কয়ারের দোকান্দারগুলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পাহাড়ী-বাঙ্গালী উভয় সম্প্রদায়ের সুশীল সমাজের নের্তৃবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সহিংসতা ও সংঘাত ভুলে জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে শান্তি-সম্প্রীতির বন্ধনে ঠিক আগের মতোই জমে উঠেছে লারমা স্কয়ার বাজার। শান্তি-সম্প্রীতির আভাসও ছড়িয়ে পড়েছে সবজায়গায়। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ সকলেই নিরাপদে যার যার মত করে চলাফেরা, কাজকর্ম ও ব্যবসা-বানিজ্য করে যাচ্ছেন। পুরোনো সেই অগ্নিদগ্ধ লারমা স্কয়ার বাজার যেন সম্প্রীতির বাজারে পরিণত হয়েছে। যেখানে শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে পাহাড়ের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।

এছাড়াও বর্তমানে জেলার ঝুলন্ত ব্রিজ, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, মায়াবিনী লেক, সর্গের সিরি, দেবতা পুকুর সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র এবং দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ভ্যালিতেও নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারছেন সারা দেশ থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। স্থানীয়দের মধ্যেও ফিরেছে স্বস্তি।

পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ী-বাঙ্গালীসহ সব সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ মনে করেন, পাহাড়ে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, মানবিক কার্যক্রম প্রদান, সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দেশ-বিদেশ থেকে ভ্রমনে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা সহ সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই।

লারমা স্কয়ার বাজারের উভয় সম্প্রদায়ের একাধিক দোকান্দারসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট কোনো ভুল-বোঝাবুঝি হলে সংঘাতে না গিয়ে সকল সম্প্রদায়ের নের্তৃবৃন্দসহ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত। তবুও বিগত সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার যেন আর কোনোদিন পুনরাবৃত্তি না হয় সেটাই আশা সকলের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে